রাঙামাটিতে মিতালী মার্মা নামে ৯ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যা মামলায় আসামি অংবাচিং মার্মা প্রকাশ আবাসুর (৪৬) মৃত্যুদন্ডাদেম দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে বাদী ও আসামিসহ উভয়পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ.ই.এম. ইসমাইল হোসেন।
আদালত সূত্র জানায়, রাঙামাটির আদালতে কোনো আসামির এটাই প্রথম মৃত্যুদন্ডাদেশ। ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির চন্দ্রঘোনা থানার রাইখালী ইউনিয়নের পূর্ব কোদালা বদ্দরপাড়ায় চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি বাদী হয়ে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যার অভিযোগে চন্দ্রঘোনা থানায় মামলা দায়ের করেন ঘটনার শিকার শিশু মিতালী মার্মার বাবা সাথুই অং মার্মা। দীর্ঘ তদন্ত ও বিচারকার্য শেষে মামলাটির রায় দিয়েছেন আদালত।
মামলার এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আদালতে উপস্থিত বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম অভি বলেন, আদালতের এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ রায়ের ফলে সমাজে এ ধরনের জঘণ্য অপরাধ কমে যাবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মামুনুর রশীদ বলেন, হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের বিষয়ে আসামির পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রায়ে বলা হয়, ঘটনার সময় শিশু মিতালী মার্মা পূর্ব কোদালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এদিন সকালে সে প্রাইভেট পড়তে গেলে অন্য শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে তাকে (মিতালী) ধর্ষণের চেষ্টা করেন শিক্ষক অংবাচিং মার্মা। এ সময় শিশুটি কান্নাকাটি ও চিৎকার করলে ঘাতক অংবাচিং ক্ষিপ্ত হয়ে শিশুটির মুখ চেপে ধরে গলায় সুতলি ও কাপড়ের ব্যাগের ফিতা দিয়ে প্যাঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর লাশ গুম করতে বস্তায় ভরে ঘরের মাচায় তুলে রাখেন। এ ঘটনায় করা মামলার অভিযোগ গঠন হয় ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। এতে মামলা প্রমাণে ২০ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এছাড়াও ১৫ পর্বের দালিলিক সাক্ষ্য দাখিল করে।
রায়ের আদেশে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার চন্দ্রঘোনা থানার বড়খোলা পাড়ার উচাখ্যাই মার্মা ও উসাং মার্মার ছেলে আসামি অংবাচিং মার্মাকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’এর ৯(৪)(খ) ধারা এবং পেনাল কোড-১৮৬০’এর ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’এর ৯(৪)(খ) ধারার অপরাধের দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাসহ ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং পেনাল কোড-১৮৬০’এর ৩০২ ধারার অপরাধের দায়ে ১ লাখ টাকা জরিমানাসহ আসামির মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। আসামির মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যক করা আদেশ দেন আদালত। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে জরিমানার অর্থ বিধি মোতাবেক জমাদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরিমানার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে হত্যার শিকার শিশুর বাবা, মা প্রাপ্ত হবেন। এছাড়া আসামিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করতে পারবেন বলে জানিয়ে দেন আদালত। রায় ঘোষণা শেষে আসামিকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ।