টানা ৫দিনের অতি বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত ১৮দিনের ব্যবধানে বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল আবারও প্লাবিত হয়েছে । এই নিয়ে চলতি মৌসুমে ৪র্থ ধাপে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে রাঙামাটিস্থ বাঘাইছড়ি উপজেলা ১২ গ্রাম। এতে পরিস্থিতি সামাল দিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতো খোলা হয়েছে ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র।
অপরদিকে বাঘাইছড়ি উপজেলা সাজেকের বাঘাইহাট- মাচালং সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সাজেকের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সাজেকে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি ডুবে যাওয়ায় পানি না কমা পর্যন্ত আটকা থাকবেন সেখানে বেড়াতে আসা পর্যটকরা।
এতে সাজেকে আটকা পড়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক পর্যটক।
খাগড়াছড়ি -দীঘিনালা সড়কের দীঘিনালা উপজেলার কবাখালি নামক স্থান বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গত ২০ আগষ্ট মঙ্গলবার বিকাল থেকে বাঘাইছড়ির সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়াও বাঘাইছড়ি – দীঘিনালা সড়কে পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকালে খাগড়াছড়ি- দীঘিনালা সড়কের দীঘিনালা উপজেলার কবাখালি অংশটি এবং মঙ্গলবার দিবাগত রাত্রে বাঘাইহাট – মাচালং সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে রাঙামাটির সাজেকসহ বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলা সঙ্গে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সাজেক যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি ডুবে যাওয়ার কারনে আটকা পড়া পর্যটকরা নিদারুণ কষ্টে পড়েছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, টানা ৫ দিনের ভারী বর্ষণের কারণে মঙ্গলবার দুপুর থেকে কাচালং নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এবং মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে উপজেলার রূপকারি, বারবিন্দু ঘাট, মাস্টার পাড়া, বটতলী, এফব্লক, পুরাতন মারিশ্যা, পশ্চিম মুসলিম ব্লক, কলেজ পাড়া,মাদ্রাসা পাড়া,হাজি পাড়া,বাবু পাড়া, লাইল্যা ঘোনা ও উলুছড়িসহ ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে যেন মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িছে বিদ্যুৎ সেবা। তীব্র লোডশেডিং এ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ জনগণ।
এর আগে এবছর ঘূর্ণিঝড় রিমেল ও মৌসুমী প্রভাবে সৃষ্ট মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো ৪দফায় প্লাবিত হয়। এতে ভোগান্তির শিকার হয় হাজার হাজার মানুষ।
প্রথম ধাপে গত ২৮ মে পাহাড়ি ঢলে ৮টির অধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। দ্বিতীয় ধাপে গত ২৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সাপ্তাহ ব্যাপী টানা বর্ষণে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদসহ ওই এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছিল। ওই সময়ে উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার পরিবার বন্যায় কবলিত হয়। এবং সর্বশেষ গত ৩ আগষ্ট টানা ৪ দিনের মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণে ৩য় দফায় বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এ নিয়ে গত ১৮দিনের ব্যবধানে ৪র্থ দফায় বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল আবারও প্লাবিত হলো।
স্থানীয়রা জানান, আবহাওয়া পরিস্থিতি উন্নত না হলে যেভাবে পাহাড়ি ঢলের পানি আসতে শুরু করছে তাতে গোটা বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রচুর পরিমাণে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনই মানুষের অশান্তির সীমা নেই। জনদুর্ভোগে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। গরু ছাগল হাস মুরগি, শিশু, বৃদ্ধা ও রোগিদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বন্যায় কবলিতরা। তারা আর বলেন, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় তীব্র পরিমাণে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। সারা দিনে খুব কম সময়ই বিদ্যুৎ এর দেখা মিলে। এতে করে তাদের জীবন চরম দুর্ভোগ’র সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ মোকাবেলায় রাঙামাটি জেলায় ২৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তার মধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলাতে ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে এখনো কোন লোকজন উঠেনি। গত রবিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার থেকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের পক্ষ হতে মাইকিং করা হয়েছে। বলা হয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত সবাইকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র চলে যেতে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরিন আক্তার বলেন, ৪ দফায় বন্যার পানি উঠতে শুরু করছে। ৫৫ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতি মধ্যে লোকজনদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। পানি বন্দী লোকজনদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সকল ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।