কক্সবাজারের উখিয়ায় চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রবেশমুখে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে নারী ও ছাত্র প্রতিনিধি, জুলাইযোদ্ধা সহ ২৭ জনকে হেফাজতে নেয়। পরে বিশেষ শর্তে প্রায় ১০ ঘণ্টা পর তাদের মুচলেকা নিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়।
বুধবার (২০ আগস্ট) সকালে বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকেই ছাত্র প্রতিনিধি জিনিয়া শারমিনসহ ২৭ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। এদের মধ্যে ২০ জন শিক্ষক, ৩ জন এনসিপি ও জুলাইযোদ্ধা এবং ৪ জন অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন।
চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে সড়কের এক পাশে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু এনজিও কর্মীদের গাড়ি আটকে পড়লে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে এবং আন্দোলনকারীদের টেনে-হেঁচড়ে গাড়িতে তুলে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। ওসি কর্তৃক হেনকাপ দিয়ে জানালার সঙ্গে বেঁধে রাখার অভিযোগও করেন তারা।
আন্দোলনকারী রুবি আক্তার বলেন, “আমরা থানার সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম আমাদের সহযোদ্ধাদের মুক্তির দাবিতে। পরে আমরা সবাইকে মুক্ত করে থানার সামনে থেকে সরে যাই।”
ঘটনার পর উত্তেজিত আন্দোলনকারীরা থানার সামনে ওসি প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকে উপজেলা জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি নেতৃবৃন্দ এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারে আগমনের পূর্ব পর্যন্ত সব ধরনের আন্দোলন স্থগিত রাখার শর্তে মুচলেকা নিয়ে ২৭ জনকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
শিক্ষক আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাইদুল ইসলাম শামীম বলেন, “সকাল থেকে আমরা বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলাম। হঠাৎ পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং ২৭ জনকে হেফাজতে নেয়। আমাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।”
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন বলেন, “আমরা বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। সরকারি নির্দেশান না মেনে কিন্তু তারা সড়ক অবরোধ করলে ২৭ জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়। তবে আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সড়ক অবরোধসহ এনজিও ও আইএনজিওর গাড়ি চলাচলে বাধা না দেওয়ার শর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, ইউনিসেফের অর্থায়নে পরিচালিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত প্রায় ১,২৫০ জন শিক্ষক চাকরিচ্যুত হওয়ার পর গত তিন মাস ধরে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।