অপারেশন উত্তরণ’সহ অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার,পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বিধিমালা প্রনয়ন, সাধারণ প্রশাসন,বন ও পরিবেশ,মাধ্যমিক শিক্ষা,আইন শৃঙ্খলা,ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট দ্রুত হস্তান্তর করা এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচন দেয়াসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে রাঙামাটির পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার বিকেলে রাঙামাটি জিমনেসিয়াম এলাকা থেকে মিছিল বের করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় রাঙামাটি জেলা শাখার সহ-সভাপতি জিকো চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন জেলা শাখার সভাপতি ম্রানু মারমা, শহর শাখা সাধারণ সম্পাদক সুরেশ চাকমা, পিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার সদস্য সুমন চাকমা, পিসিপি রাঙামাটি কলেজ শাখার সদস্য করুন জ্যোতি চাকমা সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি সাক্ষরের ২৫ বছর অতিক্রম হতে চললেও পার্বত্য চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এখন অবধি পার্বত্যবাসীর শানসতান্ত্রিক অংশীদারত্ব যেমন নিশ্চিত হয়নি, তেমনি অর্জিত হয়নি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার কাঙ্খিত রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান। চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আজ অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিধান থাকলেও এসব পরিষদের সাধারণ প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, উন্নয়নসহ প্রশাসনিক ক্ষমতা ও কার্যাবলী হস্তান্তর না করায় এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসন ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রুপ গড়ে উঠতে পারেনি। দীর্ঘ ১৫ বছর আন্দোলনের পর গত ২০১৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বিরোধাত্ম ধারা সংশোধন করা হয়। কিন্তু এর পর দীর্ঘ ৫ বছরে অধিক সময় ধরে সরকার ভূমি কমিশনের বিধিমালা ঝুলিয়ে রেখে দিয়েছে। এই বিধিমালা প্রণীত না হওয়ার কারণে কমিশনের ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত মামলার শুনানি বা বিচারিক কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।
বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তির ঘ খন্ডের ১৭ (ক) ধারা অনুযায়ী সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিজিবি) ও ৬ টি স্থানীয় সেনা নিবাস ব্যতীত প্রায় চার শতাধিক সামরিক বাহিনী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্যান্য অস্থায়ী ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে পর্যায়ক্রমে ফেরত নেওয়ার বিধান থাকলেও আজো তা প্রত্যাহার করা হয়নি। চুক্তি সাক্ষরের পর ১৯৯৭-১৯৯৯ সালে পাঁচ শতাধিক ক্যাম্পের মধ্যে মাত্র ৭০ টি অস্থায়ী এবং ২০০৯- ২০১৩ সালের মেয়াদকালে ৩৫ টি অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমানে অস্থায়ী সেনা প্রত্যাহারের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আজ চরম সংকটজনক হয়ে উঠেছে। দেশের সামগ্রিক স্বার্থেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নই হবে সংকট সমাধানের একমাত্র উপায়।
সমাবেশ থেকে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ সরকারের কাছে তিন’টি দাবি জানানো হয়-
* অতি দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণাপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
* পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন কার্যকর করতে হবে।
* ৬ টি ক্যান্টমেন্ট বাদে সকল অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার ও অপারেশ উত্তরণ প্রত্যাহার করতে হবে।