বৃহস্পতিবার , ৯ মার্চ ২০২৩ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. জাতীয়
  2. রাঙামাটি
  3. খাগড়াছড়ি
  4. বান্দরবান
  5. পর্যটন
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. রাজনীতি
  8. অর্থনীতি
  9. এনজিও
  10. উন্নয়ন খবর
  11. আইন ও অপরাধ
  12. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
  13. চাকরির খবর-দরপত্র বিজ্ঞপ্তি
  14. অন্যান্য
  15. কৃষি ও প্রকৃতি
  16. প্রযুক্তি বিশ্ব
  17. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
  18. শিক্ষাঙ্গন
  19. লাইফ স্টাইল
  20. সাহিত্য
  21. খোলা জানালা

আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করতে হবে- সাধুরাম ত্রিপুরা

প্রতিবেদক
পাহাড়ের খবর ডেস্ক।
মার্চ ৯, ২০২৩ ৯:০৭ পূর্বাহ্ণ

ছাত্র-যুব সমাজকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়ে, আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করতে হবে। বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য জেএসএস নেতা সাধুরাম ত্রিপুরা

৮ মার্চ আন্তজাতিক নারী দিবস ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্রী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির উদ্যোগে রাঙামাটির জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এ কথা বলেন সাধুরাম।

অন্যান্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা, এডভোকেট চঞ্চু চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, রাঙামাটি জেলা কমিটির ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আশিকা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা।

সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রীমতি মনি চাকমা এবং সঞ্চালনা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা। এছাড়াও সমাজের প্রগতিশীল আদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তি, সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত আকারে একটি র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালীটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে বনরুপা পেট্রোল পাম্প প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়ে। র‌্যালী উদ্ধোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির, কেন্দ্রীয় সদস্য জ্যোতিপ্রভা লারমা।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য শ্রী সাধুরাম ত্রিপুরা বলেন, আমাদের নারী সমাজ আজ পিছিয়ে নেই। তাদের পদচারণা আজ  সর্বক্ষেত্রে। আজ আমরা যদি যার যে যোগ্যতা, যার যে দায়িত্ব আমরা পালন করে আমরা যদি জাতিগত উন্নতি করতে চাই, আমরা যদি অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে একটা সুন্দর জনপদ গড়তে চাই তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে আসি, তাহলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আমাদের মধ্যে থাকা সমস্ত দুর্বলতা ও ব্যর্থতাগুলো থেকে বাহির হওয়ার সময় এখন এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিগোষ্ঠীদের মধ্যে একতা ও ঐক্য সুসংহত করতে হবে। এটা করতে না পারলে আমরা আমাদের অস্তিত্বকে হারাব। এই পাহাড় আর আমাদের থাকবে না। এই জীবন আমাদের থাকবে না। একটা সময় জীবন পর্যন্ত আমাদের হাতে ছিল না, সম্পত্তি তো অনেক দূর। এই জীবন নিজেদের করে পেতে হলে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এর কোনো বিকল্প হতে পারে না। বর্তমান বাস্তবতা দাবি করছে, ছাত্র-যুব সমাজকে তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়ে, আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করতে হবে।
বিশিষ্ট শি¶ক ও সাহিত্যিক শিশির চাকমা বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী, স্পিকার নারী হলেও আমাদের দেশে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের অবস্থান শতকরা মাত্র ১%। শতকরা ৭৩% নারী এখনো নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। অথচ, আমরা গলা ফাটিয়ে নারীর ¶মতায়ন, নারীর অধিকার, নারীর সমতার বিষয়ে বলছি। এটা মধ্যবিত্তের একটা অপকৌশল। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের ইতিহাসে এই মধ্যবিত্ত শ্রেনীর বিরাট একটা অবদান রয়েছে। আরেকদিকে এই মধ্যবিত্তের একটা  স্বার্থবাদী চিন্তা প্রবল হচ্ছে, সেটা কর্তৃত্ববাদ। আমি পার্বত্য অঞ্চলে দেখি যে, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে এই স্বার্থবাদী চিন্তা আমাদের মধ্যে প্রবলভাবে বিদ্যমান। আমরা দেখিনা কেন, আজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে উপনীত হতে এখানে সশস্ত্র সংগ্রাম হয়েছে। এই সশস্ত্র সংগ্রামে অনেক মানুষ ¶তিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে। এই সংগ্রামে অনেকে তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব হারিয়েছে। কিছু একটা পাওয়ার জন্য অবশ্যই তার হিস্যা আছে। সেই হিস্যাটা কি? তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করেছে। এই চুক্তি শুধু জনসংহতি সমিতির নয়, এই চুক্তি সমগ্র জুম্ম জনগণের। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি একটি রক্তাক্ত দলিল। এই দলিলকে অস্বীকার করা যায় না। আজকে চুক্তি বাস্তবায়নের প¶ে কাজ করতে গিয়ে অনেকে বাড়িতে থাকতে পারে না। তারা বর্তমানে  স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেনা। চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন জনসংহতি সমিতি একার না, আমাদেরকেও যুক্ত হতে হবে। কিন্তু আমরা নিজের স্বার্থের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছি না। সেখান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত না হলে, নারীর মান-মর্যাদা, তার অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, রাঙামাটি জেলা কমিটির ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমা বলেন, আজকে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীদের অধিকার, নারীদের নিরাপত্তা, নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে আমাদের কথা বলতে হচ্ছে, এটা খুবই দুঃখজনক। আজ আমাদের দেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানাভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, নারীর নিরাপত্তা ও বৈষম্যমূলক আচরণের বিপরীতে এগুলো প্রতিকারের জন্য কোনো ব্যবস্থা এযাবত পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। দেশে আইন থাকলেও সেভাবে সেগুলো কার্যকর করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, আদিবাসী নারী তথা সমগ্র জুম্ম জনগণকে শাসকগোষ্ঠী যে চোখে দেখে, সেই দৃষ্টিভঙ্গী রাষ্ট্রের পাল্টানো দরকার। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মধ্যে দিয়ে সরকার জুম্ম জনগণকে অধিকার দিয়ে এখনকার নারীদের যে নিরাপত্তা, সেই নিরাপত্তা বিধান হবে, তাদের প্রতি যে বৈষম্য, সেই বৈষম্যর অবসান হবে। কিন্তু আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সরকার সেই চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করছে না। যার ফলে জুম্ম নারীদের অধিকার, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি, আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন দুয়েক আগে কর্মস্থলের পাশে জুম্ম নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এবং বান্দরবানে এক মারমা নারীকে ধর্ষণের ঘটনা তার প্রমাণ। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য জুম্ম নারীদের অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।
অ্যাডভোকেট চঞ্চু চাকমা বলেন, আজকে নারী দিবস উদযাপনের পেছনে নারীদের অনেক ত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। আজকের সমাজে নারী তথা সমগ্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য আমাদের সবাইকে যুগপৎভাবে একযোগে কাজ করতে হবে। আজকে আমরা এমন এক বাস্তবতায় রয়েছি, যে বাস্তবতায় ন্যায্য কথা তুলে ধরতে পারা যায় না, আইনের অধিকারের কথা বলা যায় না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যায় না। বললে দেশদ্রোহী, রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি সমুন্নত ও আনুগত্য রেখেই তো ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নিয়ে কথা বললে যে রাষ্ট্রদ্রোহী হবে, পাহাড়ের মানুষগুলোর অধিকারের জন্য কথা বললে দেশদ্রোহী হবে, এটা তো হতে পারে না। সরকারের প্রতি তিনি আহবান জানান, আপনারা আমাদের আপন করে নিন। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা জুম্ম জনগণ রয়েছে, তারা কোনোদিন এই রাষ্ট্রের সাথে বেঈমানি করবে না।
এছাড়াও আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক শ্রী ইন্টু মনি তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শ্রীমতি আশিকা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী সুমিত্র চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা।

 

সর্বশেষ - আইন ও অপরাধ

%d bloggers like this: