রাঙামাটির তিন উপজেলা কাপ্তাই, রাজস্থলী ও বিলাইছড়িতে অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাড়ছে দুর্ভোগ। ফলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে কাপ্তাই লেক। পর্যটন এলাকা খ্যাত এই উপজেলাগুলোতে আবর্জনার স্তূপের ফলে কমছে সৌন্দর্য্য বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক, নদী, বাজার কিংবা পর্যটন এলাকার আশপাশে জমে থাকা এসব ময়লা আবর্জনায় রোগবালাই বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এলাকা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে লোকবল নিয়োগ করা হলেও অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনাকেই দূষছেন তারা। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশা করছেন সংশ্লিষ্টদের।
অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটির কাপ্তাই। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী পেপার মিল, ডজনখানেক মুগ্ধকরা পর্যটন কেন্দ্রের জন্য এই উপজেলার খ্যাতি দেশ ছেড়ে রয়েছে বিদেশেও। কিন্তু পর্যটকরা কাপ্তাইয়ের জেটিঘাট নেমে লেক ভিউ রেস্টুরেন্ট কিংবা হ্রদ ভ্রমণ করতে চাইলেই বাঁধে বিপত্তি। বিশাল স্তূপে জেটিঘাট এলাকার ঘাটটিতে দাঁড়ানো যেন মুশকিল হয়ে পড়েছে। ঘর-বাড়ি, দোকানপাট ও আশপাশের এলাকা থেকেও ময়লা আবর্জনা এনে ফেলা হয় এখানে। যা রীতিমত কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানকার ব্যবসায়ী, পথচারী, শিক্ষার্থীসহ সবার জন্য। বছরের পর বছর থেকে এমন স্তূপ পড়ে থাকলেও যেন নজরে আসে না কারো।
বাদশার টিলা এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার বোটে চড়ে আসতে দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। এর মধ্যে একজন সাহেলা সুলতানা। বলেন, আজ আমাদের ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষা। প্রতিদিনই এই পথ ধরে আমাদের যাতায়াত করতে হয়। ময়লার স্তূপ, দুর্গন্ধে টিকে থাকা যায় না।
হোসেন সোহেলা নামে এক ব্যবসায়ী জানান, বহুকাল ধরেই একই অবস্থা। আর ভালো লাগে না এসব। এবার একটু ব্যবস্থা নিন, প্লিজ।
স্থানীয় এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জানান, কাপ্তাই লেকের পাশে জমাট বাঁধা এসব ময়লা-আবর্জনা লেকের পানিকে দূষিত করছে। যা পান করে অনেকেই রোগাক্রান্ত হচ্ছেন। দ্রুত এর প্রতিকার নেয়া জরুরি।
শুধু জেটিঘাটই নয়, একই অবস্থা নতুন বাজার, ঢাকাইয়া কলোনি, বরফ কল ও পাবলিক টয়লেটের সামনে, বিএফআইডিসি সংলগ্ন এলাকা, চিৎমরম ক্যাংঘাট, ব্যাঙছড়ি, বনফুল রেস্ট হাউজের সামনেও। মূলত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পর্যটন শিল্প, গবাদি পশু এবং মানব সৃষ্ট উপায়ে উৎপাদিত বর্জ্য এলাকার পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি ক্ষুন্ন করছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও।
একই চিত্র রাজস্থলী উপজেলার রাজস্থলী বাজার, উপজেলা পরিষদ, বাসস্ট্যান্ড, বিলাইছড়ি উপজেলার বিলাইছড়ি বাজার, বোটঘাট, উপজেলা পরিষদের সামনে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকাগুলোতেও।
এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দ্রুত কার্যকারী পদক্ষেপ না নিলে কাপ্তাই লেক ভরাট, এলাকার সুন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি রোগবালাই বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন মানবাধিকার সংগঠনের নেতা নূর বেগম মিতা। তাঁর দাবি, প্রশাসন চাইলেই এসব অব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলায় ফেরানো সম্ভব।
কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ বলেন, কাপ্তাই ইউনিয়ন এলাকার বিভিন্ন স্থানের ময়লা-আবর্জনাগুলি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য একটি বর্জ্য পরিবহনের গাড়ি ও কিছু ড্রাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মানুষ এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে এলাকাকে নোংরা করছেন। এলাকার স্বার্থে নিয়ম ভঙ্গকারীদের নিয়ম মানতে প্রয়োজনে বাধ্য করা হবে বলে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কাপ্তাই, রাজস্থলী ও বিলাইছড়ি উপজেলায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এমন তথ্য জানা ছিল না। দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।