রাঙামাটিতে নির্মিত হচ্ছে বিপজ্জনক একটি বিশাল আয়তাকারের পানির ওভারহেড ট্যাঙ্ক। এতে স্থানীয়দের জানমালের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। শহরের রাজবাড়ী এলাকার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় কোনো রকম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই এ পানির ট্যাঙ্কটি স্থাপন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ।
এমন অভিযোগ করে সংলগ্ন বাসিন্দারা জানান, এ ধরনের পানির ওভারহেড ট্যাঙ্ক নির্মাণের ফলে এলাকার আশপাশে ভয়াবহ ভূমিধসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ভূমিধস হতে পারে। এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে এতে চাপা পড়বে নিচুতে বসবাসকারী লোকজনের বাড়িঘরে। ঘটবে প্রাণহানির ঘটনা। এমনকি পানির ট্যাঙ্কটি স্থাপন করা হলে সেটিসহ ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে। ফলে এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় সংলগ্ন বাসিন্দারা। তারা এ ধরনের কর্মকান্ডে তাদের জন্য মরণফাঁদ তৈরি করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকায় নির্মাণাধীন পানির ওভারহেড ট্যাঙ্কটির স্থাপনার কাজ চলছে। এতে পাহাড়ের ওপর থেকে মাটি কেটে সমতল করা হচ্ছে জায়গা। পাহাড় কাটার মাটি গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে উত্তর পাশে নিচু ঢালে। সেখানে লোকজনের বাড়িঘর থাকলেও তাদের নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখা যায়নি। শক্ত প্রতিরক্ষা দেওয়াল না করে দেওয়া হয়েছে গাছের খুটি আর বালুর বস্তা। ফলে তৈরি হয়েছে মারাত্মক ভূমিধসের ঝুঁকি। এতে মৃত্যুর ঝুঁকির মুখে নিচুতে বসবাসকারী ছয়টি পরিবারের মানুষ।
এ পরিস্থিতিতে আরসিসি গার্ডওয়াল নির্মাণসহ তাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে পানির ওভারহেড ট্যাঙ্কটি নির্মাণ করতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছেন বলে জানান- সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ ছয় পরিবার প্রধান সু*ট সুর চাকমা, সোনাবী চাকমা, ভবতোষ চাকমা, দুলাল চন্দ্র তন্চগ্যা ও রিজু চাকমা।
এতে তারা অভিযোগ করে বলেন, এলাকার জনগণের কল্যাণে রাঙামাটিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় পানি সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। এর অংশে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ রাঙামাটি প্রতিবন্ধী স্কুলের পেছনের জায়গায় একটি পানির ওভারহেড ট্যাঙ্ক নির্মাণ করছে। কিন্তু এতে দুই পাশে কোনো রকম আরসিসি গার্ডওয়াল দেওয়া হচ্ছে না। তা না করে কেবল গাছের খুটি ও বালুর বস্তা দিয়ে অস্থায়ী ধারক বেড়া দিয়ে বিশাল একটি পানির ওভারহেড ট্যাঙ্ক নির্মাণকাজ করা হচ্ছে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। তাছাড়া প্রকল্পটির জন্য সীমানা নির্ধারণ ছাড়াই এ কাজটি করা হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে এতে বড় ধরনের ভূমিধসের ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। নির্মাণাধীন পানির ওভারহেড এলাকায় ভূমিধস হলে নিচের ছয়টি পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে মারাত্মক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি প্রতিবন্ধী স্কুলের সম্পাদক নুরুল আবচার বলেন, এ ধরনের অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ এলাকার মানুষের জন্য মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি করছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আগে দুই পাশে আরসিসি গার্ডারওয়াল নির্মাণ করেই পানির ওভারহেড ট্যাঙ্কটি স্থাপন করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া বলেন, এডিবির অর্থায়নে পানির ওভারহেড ট্যাঙ্কটির নির্মাণকাজ চলছে। এতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ডিজাইন রয়েছে। পাশে নিচের অংশে আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে। নির্মাণাধীন ট্যাঙ্কটির পানির ধারণক্ষমতা হবে ৬ লাখ লিটার। কাজ কেবল শুরু, শেষ হলে এর স্থায়ীত্ব স্থাপনার প্রকাশ পাবে। এতে এলাকার কারও নিরাপত্তার সংকট বা প্রাণহানির আশঙ্কা থাকবে না।