বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মোঃ আবু ছায়েদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের এক অনিয়মিত বেতনের চাকুরিজীবী নারীকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন এবং মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর কয়েক ধাপে যৌন নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে বেতারের মহা-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ওই সংগীত প্রযোজক নির্যাতিত নারী।
এদিকে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে বেতার সদর দপ্তরের পরিচালক (অনুষ্ঠান) এসএম আবুল হোসেনকে আহবায়ক করে তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশ বেতার। আবুল হোসেনের সাথে ছিলেন উপ-পরিচালক শরীফুর রহমান। তদন্ত কমিটি গতকাল শনিবার (১৩ মে) রাঙামাটি কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ঘটনার শুনানি করেছে। অপরদিকে এর আগে চট্টগ্রাম বেতার এর সিনিয়র প্রকৌশলী রমেশ দেওয়ান ও বিয়টি তদন্ত করেছেন।
বেতার সদর দপ্তরে দেওয়া অভিযোগপত্রে ওই সংগীত প্রযোজক নির্যাতিত নারী উল্লেখ করেছেন, বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মোঃ ছায়েদের সহায়তায় ভুক্তভোগী নারী রাঙামাটি কেন্দ্রে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগের কিছুদিন পর থেকেই প্রকৌশলী মোঃ আবু ছায়েদ তাকে যৌন নিপীড়ন করে আসছে। এসব ঘটনা সহ্য করতে না পেরে ভুক্তভোগী নারী গত বছরের ৮ আগষ্ট ২০২২ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তখন আঞ্চলিক প্রকৌশলী তাকে হাসপাতালে ভর্তি করায় এবং ওই নারীর কাছে এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চান। কিন্তু এর কিছুদিন পর থেকেই আগের ঘটনার পুনঃ আবৃত্তি করতে থাকেন এবং চাকরি ‘খেয়ে দেওয়ার হুমকি’ দেন প্রকৌশলী ছায়েদ।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিলে ওই নারীর বাসায় এসে তাকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করেন প্রকৌশলী ছায়েদ। ওই সময় ভুক্তভোগী নারী চিৎকার করলে প্রকৌশলী ছায়েদ পালিয়ে যান। ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারী প্রকৌশলীকে নির্যাতিতা নারীকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিলে প্রকৌশলী ‘সব আশা পূর্ণ হবে’ বলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মিথ্যা আশ্বাস দেন।
গত ৪ মে ২০২৩ প্রকৌশলী ছায়েদ জানান যে, সে ওই নারীর জন্য সব করতে পারবেঃ কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না। এই ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারী কান্নাকাটি ও সুইসাইড করবে বললে লম্পট ছায়েদের ইন্দনে প্রকৌশল শাখার রাকিব, হারুন,রিপন আলী তাকে মারধর করে এবং একটি মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে জোর করে ওই নারীর কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নেয়। গত ১৩ মে ২০২৩ শনিবার বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রে শুনানিতে ভিকটিম, অভিযুক্ত ও জড়িতদের সঙ্গে কথা বলেছে তদন্ত কমিটি। এখন ন্যায় বিচারের আশায় ভিকটিম।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী নারী ও সংগীত প্রযোজক বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গত ১৩ মে ২০২৩ আমার সঙ্গে,অভিযুক্ত আঞ্চলিক প্রকৌশলী ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে পৃথক-পৃথক ভাবে কথা বলেছে।তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন সদর দপ্তরে জমা দেওয়ার পর হয়তো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অভিযুক্ত নারীর উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে বলেও জানান।এঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাকে ২-৩ মারধর করা হয়েছে। ছায়েদ স্যার আমার উজ্জত নিয়ে এখন ছিনিমিনি খেলছে। ভুক্তভোগী নারী আরো বলেন, সত্য একটি ঘটনাকে অন্য দিকে প্রবাহিত করতে প্রকৌশলীর পছন্দের লোকজন আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। আমি যদি দুনিয়ার বুকে সঠিক বিচার না পাই তাহলে আখেরাতে বিচার পাওয়ার আশায় রইলাম।
এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মোঃ আবু সায়েদ বলেন,ঘটে যাওয়া বিষয়টি নিয়ে বেতার উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। ইতি মধ্যে চট্টগ্রাম বেতার বিভাগ ও বাংলাদেশ বেতার সদর দপ্তর তদন্ত করে গেছেন তাই সত্য মিথ্যা কর্তৃপক্ষের লোকজন বুঝবেন।তবে এটা একটি মিথ্যা ঘটনা। তিনি বিভিন্ন জনের লোভে পড়ে এমন কাজ করছে। তবে তার বিরুদ্ধে যে বেতার সদর দপ্তর ও চট্টগ্রাম বেতার বিভাগীয় তদন্ত চলছে তাও স্বীকার করেছেন এই প্রকৌশলী।