দুর্গম পাহাড়ে বসবাসরত নব্বই শতাংশ জনগোষ্ঠীরা জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এক প্রকার বলা যায় জুম চাষ হচ্ছে তাদের আদিপেশা।
সেই জুমের উৎপাদিত খাদ্যশস্য দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি জুমে উৎপাদিত সবজি ও কৃষিপণ্য বিক্রি করে জুমিয়াদের সংসার চলে। তাছাড়া জুম চাষের উৎপাদিত ধানের চাউল দিয়ে সারা বছরের খাদ্যের যোগান দিয়ে থাকে তারা।
খাদ্যের যোগান মিটাতে এখন প্রতিটি পাহাড়ে জঙ্গল-ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে জুম চাষের উপযোগী করে তুলছে। ভোর হতে জুমিয়ারা পরিবার পরিজন নিয়ে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢালু পাহাড়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
জানা গেছে, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুবিধাজনক স্থানে চাষের জন্য জঙ্গল নির্ধারণ করা হয়। নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচনের পর সেই জঙ্গলের সমস্ত গাছ, বাঁশ, ঝাড়-জঙ্গল কেটে ফেলা হয়। কাটার পর সেগুলি রোদে শুকানো হয় চৈত্র মাস পর্যন্ত। তাতে শুকিয়ে যাওয়া গাছপালাগুলি পুড়িয়ে ফেলা হয়। তারপর বৃষ্টির পানিতে জমি ভিজে নরম হওয়ার পর বীজ বোনার কাজ শুরু হয়। টানা কয়েকমাস পর ভাদ্র-আশ্বিন ও কার্তিক মাসে জুমের পাঁকা ধান কাটার কাজ চলে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রুমা সড়কে যাওয়ার পথে বটতলী মারমা পাড়ায় ভোর হলে নারী-পুরুষরা দল বেঁধে ছুটে যাচ্ছেন জুম পাহাড়ে। গ্রাম থেকে প্রায় কয়েক মাইল পথ হাঁটার পর দেখা মিলে সবুজ পাহাড়ের ঘেরা খোলা আকাশের নিচে পরিপক্ক একটি পাহাড়। সেখানে সারিবদ্ধভাবে পোড়া জুমের মাটিতে দা দিয়ে গর্ত করে ধানসহ একসঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে কলা, তুলা, তিল, মারফা, কাউন, ভুট্টা, হলুদ, আদা ইত্যাদি ফসলের বীজ বপনের কার্যক্রম শুরু হয়।
রুমা বটতলি গ্রামে জুম চাষি মংক্যচিং মারমা, মাএনু মারমা, মেহ্লাচিং মারমাসহ কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তারা বলেন, অনুকূল আবহাওয়া ও নিয়মিত পরিচর্যা করতে পারলে ভালো ফলন আশা করছি। প্রায় জুম পাহাড়ে এখন চলছে বীজ বপন কাজ। ধান পাশাপাশি পাহাড়ী ফল ও বাহারি সবজির চাষাবাদ হয়েছে। জুম চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সার, বীজের পাশাপাশি সরকারিভাবে প্রণোদনা পেলে আরও উৎপাদন বাড়বে।
বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য মতে, গেল বছরে ৮ হাজার ৭শত ৫৫ হেক্টর জমিতে জুমের ধানের উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৪শত ১০ মেট্রিক টন। চলতি বছরে জুম ধানের আবাদ হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর যা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক এস এম শাহ নেওয়াজ বলেন, বান্দরবানে জুমের ধান চাষের পাশাপাশি উচ্চতর আউশ ধান চাষ করার জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকি। যার ফলে ফলন দ্বিগুন হবে। আর জুমে আদা, হলুদ, মারফা চাষ করলেও যাতে সময় মত করে সেচ দিতে পারে, সেই ব্যাপারে জুমিয়াদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যদি চলতি মৌসুমে আবাহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে এবারে উৎপাদনের পরিমান বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।