বাংলাদেশে যারা নিজেদের আদিবাসী বলে পরিচয় দেয় তাদেরকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে এমন মন্তব্য করে রাঙামাটির সাবেক সংসদ সদস্য ও জনসংহতি সমিতি(জেএসএস) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, সারা বিশ্বে ৭০ টি দেশে প্রায় ৪০ কোটি আদিবাসী রয়েছে।
যারা নিজেকে আদিবাসী বলে পরিচয় দেয় তাদেরকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে। আবেগ তাড়িত হয়ে দায়িত্বশীলতা হারিয়ে যা তা বলা যায় কিন্তু সেই বলা তা যৌক্তিক নয় সঠিক নয়।
কারণ সব জাতিতে সব সমাজে ভালো খারাপ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী মানুষ আছে। কিন্তু আদিবাসী বললে সবাইকে সন্ত্রাসী বলতে হবে এটা কিন্তু সঠিক নয়। সন্ত্রাসী বলে উসকে দিয়ে অশান্তি করার এক পায়তারা করা হচ্ছে।
অশান্তিতে আমরা কোনভাবে বিশ্বাসী নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ জনতা, শান্তিপূর্ণ আদিবাসী, শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চায়।
আবেগ তাড়িত হয়ে দায়িত্বশীলতা হারিয়ে যা তা বলা ঠিক নয়।
তিনি আরোও বলেন, উদারতা পরিচ্ছন্ন মনে স্ব-ইচ্ছা নিয়ে এগ্রিয়ে আসলে পার্বত্য সমস্যা দ্রুত সমাধান করে নেওয়া যাবে। এটা ঝুলিয়ে রাখলে হবে না।
কাজেই সব দ্বিধাদন্ধ সংশয় ছাড়া সকলকে ঐক্যবন্ধ ভাবে এগ্রিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে
বুধবার (৯ আগস্ট)সকালে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঊষাতন তালুকদার এসব কথা বলেন।
এসময় আলোচনা সভায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য এ্যাডভোকেট. চঞ্চু চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নের্টওয়ার্কের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান, বাংলাদেশ হিন্দু – বৌদ্ধ -খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সহ-সভাপতি তপন কান্তি বড়ুয়া, এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি রাঙামাটি সংসদ সভাপতি সমির কান্তি দে, বিলাইছড়ি উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শ্যামা চাকমা সহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সহ অন্যান্যরা।
এ সময় সভায় বক্তারা বলেন, রাষ্ট্র আমাদের আদিবাসী স্বীকৃতি দিতে না চাইলেও জাতিসংঘ আমাদের আদিবাসী স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের নিজস্ব ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি থাকা শর্তেও আমাদের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও উপজাতি বলা হচ্ছে। আমরা সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি চাই।
এদিকে আলোচনা সভার আগে বেলুন উড়িয়ে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। পরে উদ্বোধন শেষে আদিবাসীদের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নৃত্য পরিবেশন করা হয়৷
পরে আলোচনা শেষে দুপুরে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ হতে র্যালি শুরু হয়ে জেলা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় র্যালি ও আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়াসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ ও শিশুরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে নিজেদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন।