জাতীয় সংসদের পার্বত্য বান্দরবানের ৩০০ নং আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র প্রার্থী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সহ মোট ৩ জন প্রার্থী। তার মধ্যে হেভি ওয়েট প্রার্থী হচ্ছে বান্দরবান আসনে টানা সপ্তমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন বীর বাহাদুর উশৈসিং। তিনি বর্তমানে সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নিয়মানুযায়ী জমা দিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সম্পদের বিবরণীর হলফ নামা। এবারে বীর বাহাদুর উশৈসিং এর জমা দেয়া হলফ নামা অনুযায়ী তার বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বর্তমান বাৎসরিক আয় ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ৮৪ হাজার ৩ টাকা।
যেখানে কৃষিখাতে প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের আয় দেখানো হয়েছে ৬ লক্ষ টাকা। বাড়ি ভাড়া, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া হতে আয় দেখানো হয়েছে ১৫ লক্ষ ৭২ হাজার ৩ শত ১২টাকা। ব্যবসা হতে ব্যক্তিগত আয় দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৮২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৯ শত ৩১ টাকা এবং প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের আয় দেখানো হয় ৪৫ লক্ষ ৪৬ হাজার ২ শত ৫ টাকা।
শেয়ার, সঞ্চয় পত্র, ব্যাংক আমানত দেখানো হয়েছে ৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ১ শত ৬৬ টাকা। এই খাতে প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের আয় দেখানো হয়েছে ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ৩ শত ৮৯ টাকা।
হলফ নামায় বীর বাহাদুর উশৈসিং এর ব্যক্তিগত অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ মোট ১০ কোটি ৯ লক্ষ ২২ হাজার ৭ শত ২১ টাকা দেখানো হয়েছে। এবং স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে মোট ৪ কোটি ৬৪ লক্ষ ৮ হাজার ২ শত ২৮ টাকা সহ সর্বমোট ১৪ কোটি ৭৩ লক্ষ ৩০ হাজার ৯ শত ৪৯ টাকা। যার মধ্যে নিজের নামে নগদ টাকা ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৩ শত ৮ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৩৬ লক্ষ ১৪ হাজার ৬ শত ৪১ টাকা।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে জমাকৃত অর্থের পরিমান ৬ কোটি ১ লক্ষ ২০ হাজার ৬ শত ৩৯ টাকা। এবং স্ত্রীর জমাকৃত অর্থের পরিমান ২ কোটি ৫১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৫ শত ৮৭ টাকা। পোস্টাল, সঞ্চয়পত্র স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ নিজ নামে ১০ লক্ষ টাকা। এবং স্ত্রীর নামে ২০ লক্ষ টাকা।
অস্থায়ী সম্পদ বিবরণে দেখানো হয়েছে নিজ নামে ৪ টি বাস, ২ টি জিপ গাড়ি, ১ টি প্রাইভেট কার, যার মূল্য ৩ কোটি ৮ লক্ষ ৪০ হাজার ৭ শত ৭৪ টাকা। এবং স্ত্রীর নামে আছে ২ টি বাস, ২ টি জীপ গাড়ি, যার মূল্য ৮৪ লক্ষ ৫ টাকা। স্বর্ণালংকার নিজ নামে ৫ লক্ষ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৪ লক্ষ টাকা।
ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নিজ নামে ৪ লক্ষ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৩ লক্ষ টাকা। আসবাবপত্র নিজ নামে ৩ লক্ষ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২ লক্ষ টাকা। হোটেল ব্যবসায় নিজ নামে ৭৫ লক্ষ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৪৩ লক্ষ টাকা এবং ঠিকাদারি ব্যবসা ২০ লক্ষ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে হলফ নামায়। নির্বাচনী হলফনামায় বীর বাহাদুর উশৈসিং এর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১২ কোটি ৯১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৫ শত ৬১ টাকা। যার মধ্যে দঃ হাঙ্গর মৌজার ৩০ একর ৩য় শ্রেনীর জমির অর্জনকালীন সময়ের মূল্য ৩১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা, হার্টিকালচার প্লট ২৫ একর জায়গা ৭৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রামের সিডিএ অনন্যা হাউজিং সোসাইটির ৫ কাঠার প্লট ৩৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, শৈলশোভা দুইটি মিলে ২০ শতক জয়াগা মধ্যে ৩৭ লক্ষ টাকা, গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার এর সামনে ২০ শতক জায়গা ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, জেলা সদরের মধ্যম পাড়ায় ৬ তলা ভবন ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, ফায়ার সার্ভিস এলাকায় আরেকটি বাড়ির মূল্য ২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা, ভেনাস রিসোর্টের ৫টি কটেজ ৬৫ লক্ষ টাকা, তিন তলা ভবন ৬০ লক্ষ রেস্টুরেন্টে কুক সেট ১৭ লক্ষ টাকা, তিন তলা আরেকটি ভবন ২ কোটি ৫০ লক্ষ ৩৩ হাজার ৬ শত টাকা, নির্মাণাধীন ভবন ৪০ লক্ষ টাকা, নির্মাণাধীন দুইটি কটেজ ২০ লক্ষ টাকা, আরো দুইটি বাড়ি ১ কোটি ১৬ লক্ষ ১৫ হাজার ৯ শত ৬১ টাকা। এবং রাবার বাগান নিজের নামে ১০ একর জমির মূল্য ৫ লক্ষ টাকা ও স্ত্রীর নামে লীজ নেয়া ৫০ একর এর মূল্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া ইসলামি ব্যাংক বান্দরবান শাখায় দায় আছে ৩০ লক্ষ ৮১ হাজার ৯ শত ৭০ টাকা, ব্যক্তিগত ঋন ১ কোটি টাকা, ফ্লাটের ভাড়ার অগ্রীম জামানত ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা সহ সর্বমোট ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ২৭ হাজার ৯ শত ৭০টাকা।
এদিকে ২০১৪ সালে বীর বাহাদুরের বার্ষিক আয় ছিল ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফ নামায় বীর বাহাদুর উশৈসিং এর বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ২ কোটি ৫ লক্ষ ৪৯ হাজার ৪ শত ৭৯ টাকা। বর্তমান বাৎসরিক আয় ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ৮৪ হাজার ৩ টাকা। এতে দেখা যায়, গত ৫ বছরের ব্যবধানে বীর বাহাদুর উশৈসিং এর বাৎসরিক আয় বেড়েছে ১কোটি ৬৫ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫শত ২৪ টাকা।
২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় সর্বমোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিলো ১০ কোটি ১২ লক্ষ ৮৩ হাজার ৯ শত ৬৮ টাকা। পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৫ বছরে বীর বাহাদুর উশৈসিং এর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৪ কোটি ৬০ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯ শত ৮১ টাকা।
এছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিলো ৬ কোটি ৫ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা, যা ৫ বছরে বেড়েছে ৬ কোটি ৮৬ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫ শত ৬১ টাকা। ২০১৮ সালে ইসলামি ব্যাংকে দায় বাবদ দেখানো হয়েছিল ১ কোটি ৮২ লক্ষ ৩৯ হাজার ৯ শত ৭৮ টাকা।
এতে গত ৫ বছরে ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য ঋন কমেছে ৪৭ লক্ষ ১২ হাজার ৮ টাকা। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল এই ৫ বছরের ব্যবধানে বীর বাহাদুর উশৈসিং ও তাঁর স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় কয়েকগুণ কমেছে ঋনের পরিমাণ।