বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো রাঙামাটিতে আয়োজিত ‘বিজুমেলা’। মেলার শেষ মুহূর্তে জমে ওঠে চাকমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পাজন রান্না প্রতিযোগিতা। মাতিয়ে তোলে মেলাকে। পাজন হচ্ছে বহু প্রজাতির শাক-সবজির মিশালী তরকারি, যা খেতে খুবই স্বাদ ও মুখরোচক। মেলা নিয়ে নানা অভিযোগও উঠেছে।
পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব উপলক্ষ্যে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে বসে ৪ দিনব্যাপী ‘বিজু সাংগ্রাই বৈসুক বিষু বিহু মেলা ২০২৪’। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় এ মেলার আয়োজন করে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিিিটউট। ৩ এপ্রিল শুরু হওয়া মেলার শেষ দিন শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী পাজন রান্নার প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতা মেলা ঘিরে তৈরি করে উৎসবের বন্যা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে উন্মুক্ত চুলায় রান্না করে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন পাহাড়ি রাধুনীরা। এতে চাকমা ছাড়াও অন্য সম্প্রদায়ের নারী অংশ নেন। প্রতিযোগিতা চলাকালে উৎসবে মেতে ওঠেন প্রতিযোগী রাধুনী ও দর্শকরা। মেলায় এছাড়াও সাংস্কৃতিক উৎসবের পাশাপাশি জমে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পণ্য ও খাবার কেনাকাটা।
প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল পাহাড়িদের ঘরে ঘরে পালিত হয় তিন দিনের মুল উৎসব। এ উৎসব চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু ও অহমিয়া সম্প্রদায় বিহু নামে পালন করে থাকেন। উৎসব সামনে রেখে রাঙামাটিতে আয়োজিত এবারের মেলায় পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উৎসব, খেলাধুলা, নাটক মঞ্চায়ন, পোশাক, অলংকার, পণ্য-সামগ্রী, বাহারি খাবার প্রদর্শনী, পরিবেশন ও বেচাকেনার স্টল বসে।
রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক রুনেল চাকমা জানান, মেলার শেষ দিন শনিবার ঐতিহ্যবাহী পাজন রান্না প্রতিযোগিতা, মহিলাদের অংশগ্রহণে খেলাধূলা, তঞ্চঙ্গ্যা নাটক মঞ্চায়ন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট শিল্পীদের সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনার আয়োজন করা হয়।
এদিকে মেলা নিয়ে নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগও ওঠে। বিভিন্ন জনের অভিযোগ মতে, সরকারি অনুদানে মেলার আয়োজন করা হলেও তাতে প্রয়োজনীয় ব্যয় চোখে পড়ার মতো নেই। এছাড়া মেলায় যেসব স্টল বসানো হয়েছে সেগুলো থেকে আদায় করা হয়েছে অর্থ। তাই মেলার জন্য দেওয়া বরাদ্দের অর্থ এবং আয় আত্মসাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে লোকজনকে মেলায় প্রবেশে বাধা দেওয়ায় বিশৃঙ্খলার অভিযোগ করেছেন অনেকে।
এসব বিষয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হলে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক রুনেল চাকমা বলেন, মেলা অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে হয়েছে। এতে বিশৃঙ্খলা বা অনিয়মের কিছুই নেই। এরপরও বিস্তারিত জানতে হলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।
পরে সাংস্কৃতিকবিষয়ক কমিটির আহবায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্য রেমরিয়ানা পাংখোয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি দেখবেন।