পাহাড়ে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তি বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। পার্বত্য চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। কিন্তু তাঁর কাছে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়া হচ্ছে না। এর কারণে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় নিত্য নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তৈরি করা হচ্ছে পাহাড়ে। পাহাড়ে শান্তিপুর্ন সহাবস্থান পরিবেশ তৈরি করতে হলে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে চুক্তি বাস্তবায়নের বিপরীতে চুক্তিকে অকার্যকর করে রাখতে একটি অংশ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কথাগুলো বলেছেন রাঙামাটি বান্দরবান খাগড়াছড়ি জেলার বিশিষ্টজনরা।
সোমবার সকালে রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটি জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন পাহাড়ের বিশিষ্টজনরা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এ সময় তিনি বলেন, পাহাড়ে এখনো শান্তিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়নি। এক জেলার মানুষ অন্য জেলায় এমনকি জেলার মাঝেও কোন কোন এলাকায় যেতে পারে না। নানান চাপে তারা তাদের মৌলিক অধিকারের কথা বলতে পারছে না। পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের ২৭ বছরেও পুর্ন বাস্তবায়ন না হওয়ায় অনেক মান অভিমান জন্মাতে পারে। এ নিয়ে বসে থাকলে হবে না। কাজ করতে হবে।
পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যারা কাজ করে যাচ্ছেন তাদের আরো বেশী মনযোগী হতে হবে। তাদের আমলে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হতে হবে। না হলে এর গুরুত্ব হারাবে।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। পাহাড়ের পরিস্থিতি যে অশান্ত সেটা বুঝাতে এখন আর উদাহরণ দিতে হয় না। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন থুবড়ে পড়ে আছে।
বিশেষ অতিথি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র করা হয়। এখানে ভাগ কর শাসন কর নীতি বিরাজমান।
নির্বাচনে জামানত ১ লাখ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সাধারণ মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। নির্বাচন ধনী শ্রেণীর কাছে চলে গেছে।
চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম যেটার উপর দাঁড়িয়ে আছে সেই পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বহিরাগত ঠিকানা বিহীন দুজনের নাম দিয়ে রেগুলেশন বিলুপ্ত করে উচ্চ আদালতে রিভিউ করা হয়েছে।
এ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিলুপ্তি করতে এটর্নি জেনারেল কাজ করছেন। এটি বিলুপ্তি করা মানে পার্বত্য চুক্তিকে অস্বীকার করা। বাংলাদেশ একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্র সেটি অস্বীকার করা।
রেগুলেশন বাতিল করা হলে পাহাড়ের মানুষ বসে থাকবে না। তারা রাজপথে নামবে। চাকমা রাজার সাথে সম্পুর্ন একমত পোষন করে মং রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন নিয়ে ষড়যন্ত্র পাহাড়ের মানুষ সহ্য করবে না।
বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৈশহ্লা বলেন, পাহাড়ে সম্প্রীতি নষ্টের জন্য বিদেশী শক্তি কাজ করছে। ২০১৮ সালে ৪২ জন বম তরুণকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দিয়ে এদের মধ্যে ৪০ জনকে বান্দরবানে পাঠিয়ে কখনো চাকমা বিদ্বেষ কখনো মারমা বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এর কারণে বান্দরবান এখন অশান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে স্বশাসন পেয়েছি। প্রথাগত বিচার ব্যবস্থা স্বীকার করা হয়েছে। মুল ধারার সাথে নেয়া যায় সে পরিবেশ তৈরি হয় কিন্তু সে চুক্তি ২৭ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। এটিকে চুক্তি বাস্তবায়ন বলা হলো হবে না। পাহাড়ে এখন মৌলিক অধিকার সংকট তৈরি হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি মুল বিষয় ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে না। উল্টো চুক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে।
আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুদত্ত বিকাশ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য কংজরী চৌধুরী, সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান,মানবাধিকার কর্মী জুমলিয়ান আমলাই বম, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য নুরুল আলম, শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা।