পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কোয়ালিটি এডুকেশন গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম ও ডিজিটালাইজেশন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। উপদেষ্টা বলেন, আমরা পার্বত্যবাসীরা আধুনিক শিক্ষা কীভাবে আদায় করতে হয় তা সম্পর্কে জানতে হবে। খাগড়াছড়িতে আমরা ইংলিশ ক্যারিকুলার স্কুল গড়ে তুলবো। তিনি বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার ক্রাইসিস দুর করবো।
আজ রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স ভবনের অডিটোরিয়ামে তিন পার্বত্য জেলা ও রাজধানীতে বসবাসরত পার্বত্য আদিবাসী সরকারি বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত পার্বত্য অঞ্চলের ছাত্র-শিক্ষক প্রতিনিধি, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাজীবীর মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সুপ্রদীপ চাকমাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাতে এলে সেখানে আয়োজিত এক উন্মুক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেছেন, আমাদের পাহাড়ি ছেলেমেয়ে আর্মিদের স্কুলে পড়তে অনাগ্রহ থাকে। আর্মিদের স্কুলে পড়াশুনার মান অত্যন্ত ভালো। ভালো শিক্ষা গ্রহণ করতে পাহাড়ি ছেলেমেয়েদের ঐসব স্কুলে পড়াশুনা করতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, ছাত্রদের জন্য ৪টি হোস্টেল নির্মাণ করা হচ্ছে। রাঙ্গামাটির রাজস্থলিতে একটি হোস্টেলের কাজ চলছে। ছাত্রদের জন্য আরও হোস্টেল নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
পার্বত্যবাসীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি করতে পার্বত্য তিন জেলায় লাইভলিহুড ডেভেলপমেন্ট গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সকল কাজ আমরা করবো। পার্বত্য অঞ্চলের মাটিতে অর্থকরী ফসল হিসেবে কাজু বাদাম ও ইক্ষুর চাষ বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় বাঁশ ও ইক্ষু চাষের মাধ্যমে আগামি ৩ বছরের মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা গুরুত্ব দিয়ে বলেন, পার্বত্য তিন জেলায় কমিউনিটি বেইজড সোসাইটি গড়ে তোলা হবে। পরিবেশ রক্ষা ও পানির উৎস বাড়াতে ফলপ্রসু উদ্যোগ নেয়া হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় নদী, নালা, ঝিরিগুলোর পানির প্রবাহ ঠিক করা হবে। আম গাছ, কাঁঠাল গাছ, লিচু গাছসহ নানা প্রকার গাছ রোপণ করা হবে। তিনি বলেন, ৩ জেলা পরিষদে নারী সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হবে। গর্ভবতী নারী ও শিশু চিকিৎসায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে দ্রুত ৩ পার্বত্য জেলার জন্য ৩টি এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি পার্বত্যবাসীদের জন্য খাগড়াছড়িতে একটি নার্সিং কলেজ এবং বিলাইছড়িতে একটি কলেজ গড়ে তোলা হবে বলে জানান। এছাড়া যারা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে না, তাদের বাংলা ভাষা শিখানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, গুড গভর্ন্যান্স গড়ে তোলাসহ জেলা পরিষদগুলোকে পুনর্গঠন করা হবে।
সভায় মাতৃভাষা শিক্ষা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ প্রতিনিধি নির্বাচন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উপদেষ্টা কমিটি, ভিলেজ কমন ফরেস্ট, মডেল প্যাগোডা বা বিহার নির্মাণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা, নারীদের সকল প্রকার উন্নয়ন কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, দুর্গম এলাকার নারী ও শিশুদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা, নারীদের সহিংসতা প্রতিরোধে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন, আদিবাসী নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, পানির সংকট নিরসন, পার্বত্য এলাকায় বিদেশি দাতা সংস্থাসমূহ থেকে ডেনারের সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় সকলেই যার যার নিজস্ব ক্ষেত্র থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাকে সহায়তা করবেন বলে আশ্বস্ত প্রদান করেন।
আলোচনা সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আহতদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে আম-জনতার ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে বলে সকলে মত প্রকাশ করেন। উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যেক জেলায় ২ জন করে ছাত্র রিপ্রেজেন্টেটিভ রাখতে চাই। তিনি বলেন, সকল ক্ষেত্রে নিউট্রালিটি বজায় রাখা হবে।
সভায় মিজ নন্দিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব কংকন চাকমা, পার্বত্যবাসী প্রতিনিধিদের মধ্যে উৎপল দেওয়ান, প্রতুল দেওয়ান, কীর্তি নিশান চাকমা, বিপ্লব চাকমা, ক্রাজাই চৌধুরী, যতন বড়ুয়া, ইলিরা দেওয়ান, ইলা চৌধুরী, নিকোলাস চাকমা, ফাল্গুনি ত্রিপুরা, হ্লা মং প্রু, ডা. উবানু মারমা, পূর্ণলেখা চাকমা, সুবল কান্তি চাকমা, পূন্য বর্ধন চাকমা, রনি বম, লালস্টানলিয়ান পাংখোয়া, মিল্টন চাকমা, জুলিয়ান বম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।