খাগড়াছড়ির রামগড় থানায় করা হত্যা মামলায় উপজেলার ওয়াইফাপাড়া সামাজিক কবরস্থানে দাফনের ১৪দিন পর শিশু ফাহিম হোসেন মজুমদার (১২) এর লাশ কবর থেকে তোলা হয়েছে।
বুধবার (২১ আগষ্ট) দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো: আতিকুর রহমানের উপস্থিতিতে রামগড় থানার উপ-পরিদর্শক আজিম হোসেন খান শিশুটির লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্যে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে পাঠান।
নিহত ফাহিম হোসেন মজুমদার রামগড় উপজেলার ওয়াইফাপাড়া গ্রামের মো: সাইফুল ইসলামের ছেলে। ফাহিম নতুন বাজার মাদরাসার ৫ম শ্রেনীর ছাত্র ছিল। হত্যাকান্ডের ঘটনা উম্মোচিত হলে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা একই গ্রামের মুমিনউল্ল্যার ছেলে মো. মাঈন উদ্দিন (১৭), নুরুল আমিনের ছেলে আসাদ উল্ল্যাহ গালিব (১২), শফিকুল ইসলামের ছেলে আজাদ হোসেন উছাইদ (১৬) এবং মীর হোসেনের ছেলে মো. আল ফাহাদ (১৫) কে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এস আই আজিম হোসেন খান বলেন, মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে আদালতের আদেশে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতিকুর রহমান জানান, বাদীর উপস্থিতিতে শিশুটির লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ আবারও দাফন করা হবে।
আটক সহযোগী গালিব জানায়, পূর্বে গালমন্দ ও অসম্মান করায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ আগস্ট মঙ্গলবার সকালে মাইন উদ্দিন ও সে নিজে শিশু ফাহিমকে কৌশলে বাড়ির নিচে নির্জন ও বনজঙ্গল ঘেরা একটি পুকুরে নিয়ে যায়। গোসল করার নাম করে তারা তিনই পুকুরে নামে। এসময় মাইন উদ্দিন ফাহিমকে পানির মধ্যে চেপে ধরে রাখে। এক পর্যায়ে ফাহিম অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারা দুজন তাকে টেনে পুকুরপাড়ে উঠায়। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ফাহিমের অচেতন দেহ টেনে হেঁছড়ে পাশের উঁচু টিলার গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য মাইন উদ্দিন জঙ্গলি লতা দিয়ে গলায় শক্ত করে পেঁচিয়ে রাখে। কিছুক্ষণ পর মৃতদেহ টেনে-হেঁছড়ে টিলা থেকে নামিয়ে পুণরায় ঐ পুকুরের পাড়ে নিয়ে যায় তারা। শিশু গালিব আরও জানায়, হত্যার খবর জানিয়ে লাশ পুঁতে ফেলার জন্য মাইন উদ্দিন মোবাইল ফোনে কোদাল নিয়ে আসতে বলে বন্ধু উচাইদকে। কিন্তু সে না আসায় পুকুর পাড়ে লাশ রেখে বাড়ি চলে যায় তারা। গালিব জানায়, তারা ফাহিমের গায়ের গেঞ্জি আগুনে পুড়ে তার পায়ের জুতাসহ পুকুরের পাশের টিলার ঢালে গর্ত করে পুঁতে রাখে।
মামলার বাদি সাইফুল ইসলাম বলেন, ৭ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরেও ফাহিম বাড়ি না আসায় তারা সবাই মিলে তাকে খোঁজাখুজি শুরু করেন। তার সন্ধানে মাইকিংও করা হয়। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে জঙ্গলঘেরা পুকুর পাড়ে তার মরদেহ পাওয়া যায়। বুধবার সকালে তার লাশও দাফন করা হয়। পরে ঐ পুকুর পাড়ে ফাহিমের জুতা ও গায়ের গেঞ্জি খুঁজতে গেলে মাটিতে পুঁতেরাখা অবস্থায় আগুনে পোড়া গেঞ্জি ও জুতা পাওয়া যায়। এতে ফাহিমের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ হয় তাদের। গ্রামের লোকজনসহ তারা ফাহিমের খেলার সঙ্গী গালিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যার ঘটনা বলে দেয়। পরে গ্রামবাসিরা মাইন উদ্দিনসহ চারজনকেই আটক করে।
তিনি আরো বলেন, মামলার পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আদালতের নির্দেশে আজ ছেলে ফাহিমের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়।