সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটনার পর বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ বছর পাহাড়ে কঠিন চীবর দানোৎসব পালন নিয়ে শঙ্কিত বৌদ্ধ সম্প্রদায়। তবে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এ কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পূর্ণ শান্তিশৃঙ্খলা ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করতে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ।
সোমবার দুপুরে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের আহবানে শুভ কঠিন চীবর দান ২০২৪ পালনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে এ আশ্বাস ব্যক্ত করেন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা। এর আগে রোববার রাঙামাটি শহরের কাঁঠালতলী মৈত্রী বিহারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে নিরাপত্তাহীনতার কারণে এ বছর তিন পার্বত্য জেলায় কঠিন চীবর দানোৎসব বাতিল ঘোষণা করেন পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্মিলিত বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘ।
উল্লেখ্য, কঠিন চীবর দানোৎসব বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। প্রতি বছর তিনমাস বর্ষা অধিষ্ঠান শেষে শুভ প্রবারণা বা আশি^নী পুর্ণিমা উদযাপনের সঙ্গে সঙ্গেই বিহারে বিহারে মহাসমারোহে এ কঠিন চীবর দানোৎসবের আয়োজন করা হয়, যা মাসজুড়ে চলে। এ বছর ১৭-১৮ অক্টোবর থেকে উৎসবটি শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু সম্প্রতি খাগড়াছড়ি,দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া পাহাড়ি বাঙালি সাম্প্রদায়িক ঘটনায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও ভিক্ষু সংঘ বিভিন্ন অজুহাত তুলে ধরে উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে দেখা দেয় পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা। এতে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তিন পার্বত্য জেলায় এবার কঠিন চীবর দানোৎসব আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নেন বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘসহ সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ। অনেকে বলছেন এটা একটা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের ইস্যু। ওই ঘটনার পর থেকে পাহাড়ে এমন কোন পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি যে তারা নিরাপত্তায় ভুগছেন।
এরপর বরাবরের মতো জাকজমকপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পাহাড়ে কঠিন চীবর দানোৎসব পালনের লক্ষ্যে সোমবার বৌদ্ধ পুরোহিত, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে এক জরুরি মতবিনিময় সভা আহবান করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুপুর ১টার পরে আহবান করা এ মতবিনিময় সভায় পার্বত্য ভিক্ষুসংঘ বাংলাদেশের সভাপতি শ্রীমৎ শ্রদ্ধালংকার মহাথেরসহ ৫-৭ জনের বৌদ্ধভিক্ষুর একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত হলে তাদের অনুরোধে প্রথমে বৌদ্ধভিক্ষু প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে আলাদাভাবে একান্তে কথা বলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেনসহ সামরিক বেসামরিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। পরে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দলের নেতাসহ উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জেলা প্রশাসক।
এ সময় আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে রাঙামাটিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বরাবরের মতো উৎসবমুখর পরিবেশে শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব আয়োজনের আহবান জানান জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা। উৎসব শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘœভাবে পালনে যে কোনো মূল্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দেন তারা। এজন্য যা কিছু করতে হয় তারা সবকিছুর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়। অন্যদিকে তিন পার্বত্য জেলার সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানান উপস্থিত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।