মোঃ আবু তাহের। পেশায় একজন দিনমজুর। পরিবারের সদস্য সংখ্যা নয় জন। ২৫ বছর ধরে বসবাস করেন রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার রাঙ্গীপাড়া গ্রামে। তাহেরের এক ছেলে তিন মেয়ে। ছেলে রাসেলও পেশায় একজন দিনমজুর। তিন মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন তাহের। ছোট মেয়ে হাসিনা শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্ম থেকে তার একটি পা নেই।
কিন্তু দিনমজুর বাবার কাঁধে হাত রেখে এক পায়ে ভর করে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে পদার্পন করেছেন আত্মপ্রত্যয়ী হাসিনা। ২০১৫সালে এসএসসিতে অংশগ্রহণ করে ৩.০৫ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হন। অভাব অনটনের সংসারে যেখানে এক বেলা খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হয় বাবা তাহরেকে। সেখানে মেয়েকে কলেজে ভর্তি করানোর স্বপ্ন দেখাতে থাকেন দিনমজুর তাহের।
অর্থ নামক টানাপোড়েনের বাঁধা উপেক্ষা করে কাউখালী কলেজে ভর্তি হন শারীরিক প্রতিবন্ধী হাসিনা। এইচএসসিতে ৩.১৭ পয়েন্ট নিয়ে সেখানেও উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে কাউখালী কলেজে ডিগ্রিতে পড়ছেন হাসিনা। তাহেরের পরিবারে উপার্জনক্ষম বলতে তিনি এবং তার ছেলে। দু’জনের কাঁধে ভর করে চলছ পরিবার নামক ৯ সদস্যের বিশাল এক জাহাজ।
২৫ বছরে পৃথিবী অনেক বদলে গেছে। কিন্তু বদলায়নি তাহেরে ভাগ্য। জমিজমা বলতে তাহেরের কিছুই নেই। অন্যের জমিতে মাথা গোঁজার জন্য আছে একটি ঝুপড়ি ঘর। নেই কোন স্যানেটেশন ব্যবস্থা। ঘরের ভেতর শুয়ে পূর্নিমার চাঁদ আর আকাশের তারা গুনতে তাহেরদের খোব একটা সমস্যা হয়না। ২০১৭ ও ২৪ সালের টানা বর্ষনে সৃষ্ট বন্যায় মাথার গোঁজার একমাত্র অবলম্বন সেই ঘরটিও আজ ইছামতি নদীতে বিলীন হওয়ার পথে।
ঘরের অর্ধেক ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে চলে গেছে। যেটুকু ঘর অবশিষ্ট রয়েছে তার মাঝ বরাবর ফাটল ধররেছে। নদীর পাড়ে অন্ততঃ ৬০ ফিট খাদের কিনারায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঠাই দাড়িয়ে আছে তাহরের বেঁচে থাকার স্বপ্ন। যে কোন মূহুর্তেই নদীতে বিলীন হয়ে যাবে ঘরটি।
বিগত ১৫ বছর আইডি কার্ড হাতে তাহের সরকারী একটি ঘরের আশায় কতো শত রাজনৈতিক নেতা এমনকি সরকারি কর্তা ব্যক্তিদের পেছনে পেছনে ঘুরেছেন তার কোন ইয়াত্তা নেই। তবুও ভিটেমাটি হীন দিনমজুর তাহেরের কপালে একটি ঘর জুটেনি। প্রশ্ন হলো তাহেরের মতো ভিটেমাটি হীন অসহায় পরিবার সরকারি ঘর না পেলে শত শত ঘর কারা পেলো? সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে খতিয়ে দেখার সময় হয়েছে।
এসব ভিটেমাটিহীন অসহায় তাহেররা ঘর না পাওয়ার কারণ সরকারী ঘর পাওয়ার যোগ্যতার দৌড়ে রাজনৈতিক যে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তৈরী করা হয়, তাহেররা সেখানে বারবারই অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। তাহেরদে মতো ব্যক্তিদের রাজনৈতিক কোন বলয় নেই। ফলে এসব সরকারী ঘর পাওয়ার অধিকারও তাদের নেই।
তাইতো জীবনের নিরাপত্তায় শতভাগ ঝুঁকি থাকার পরও থাকতে হবে এখানেই। মানুষ হয়তো জানবে কোন এক বর্ষায় তাহেররা ভয়াল ইছামতির শ্রোতের তরে হারিয়ে গেছে। এরকম কতো তাহের সমাজের অলিগলিতে নিজের জীবনের গল্প সাজাচ্ছেন কে জানে?
কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।