রাঙামাটি জেলা লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দ্বিতীয় তলা ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করা হচ্ছে মর্মে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্মাণ কাজে এত নিন্মানের সরঞ্জামাদি ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে যা সাধারণ মানুষও দেখলে বুঝতে পারবেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকেও এবিষয়ে এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগে অভিযোগ করেও কোন সুরাহ পাননি তারা। নিন্মমানের ইট, বালু, রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে বিদ্যালয় নির্মাণ কাজে।
স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা বলেন, কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলা ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মর ও দুর্নীতি করা হচ্ছে। অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। স্কুল ভবনটি নির্মাণ কাজে নিম্নমানের ইট, বালু ও পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপও কামনা করেছি। কিন্তু তার পরও রীতিমত গায়ের জোরে কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। উপজেলা এলজিইডি অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিস দেখেও না দেখার বান ধরে বসে আছে। শিক্ষক ও স্থানীয়দের অভিযোগ পাওয়ার পরেও দেখছি, দেখবো বলে চুপ করে বসে আছে।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কফিলউদ্দিন মাহমুদ বলেন, যেহেতু বিদ্যালয় নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে সেহেতু খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি মোঃ খায়রুল হাসান বলেন, বিদ্যালয়টি নির্মাণ কাজ শুরু করার সাথে সাথে আমরা ২নাম্বারি নির্মাণ সামগ্রী উপর অভিযোগ দিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্টদের যোগ সাজশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার। আমাদের নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউ। ফ্লোর ও ছাদ ঢালাই সবখানেই অনিয়ম দুর্নীতি করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা যেসব দুই নাম্বারি ইট বোট থেকে তুলছে তখনই আমি নিষেধ করি যে এসব ইট দিয়ে আপনারা কাজ করবেন না। কিন্তু তারা আমার কথা শুনেনি, পরবর্তীতে এসব দুই নম্বর ইট ফ্লোরে লাগিয়েছে। তখন আমি কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেই। কিন্তু তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির নবাগত প্রধান শিক্ষক জামাল হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে আমি ঠিকাদারের সাথে কথা বললে, ঠিকাদার আমাকে জবাবে বলেন, আমরা বিভিন্ন স্কুলের কাজ এভাবেই করে আসছি, কোথাও কোথাও ইট ছাড়াই ফ্লোর ঢালাই করেছি কোথায়ও কোনো সমস্যা হয় নাই। এখানে কেন সমস্যা হবে!
সোনারগাঁও এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার খোকন বলেন, আমিও শুনেছি স্কুলের কাজে দুই নাম্বারী হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা দরকার। তাই আমি এই এলাকার মানুষ হিসেবে ভাল কাজ হউক এটা আমি চাই।
লংগদু উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আলম মুঠোফোনে বলেন, বিদ্যালয়টি নির্মাণ কাজ ভাল ভাবেই হচ্ছে। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় লোকজন ইট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিদ্যালয়ের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে এব্যাপারে তদন্ত পূর্বক বিহীত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আসলে এসব এলাকায় প্রকৃত ঠিকাদাররা কাজ করতে চায় না। এখন যে ঠিকাদারের কাজ করছে সে দ্বিতীয় পার্টি।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে (দ্বিতীয়) ঠিকাদার রিপন কুমার দাশকে একাধিক বার এই নাম্বারে ০১৬৩২৭৮৪৫৬০ ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই রিপনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে প্রথম দিকে লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলা ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কাজটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাস্তবায়ন করছে। ১কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার ২৯৯ টাকা বরাদ্দে কাজ করছে রিপন কুমার দাশ নামে এক ঠিকাদার।