রাঙামাটি পার্বত্য জেলার প্রত্যেক উপজেলা থেকে সদস্য না নিয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্নগঠন সংবিধানের সাথে কেন সাংঘর্ষিক নয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পূর্নগঠনের প্রজ্ঞাপনটি (২৯,০০,০০০০,০০০,২১৪,১৮,০০২২,২৪,১১৯, তারিখ ৭নভেম্ব’ ২০২৪) কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবেনা এই মর্মে রুল জারী করেছে মহামান্য হাইকোট। একই সাথে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য প্রনতী রঞ্জন খীসা ও রাঙাবী তঞ্চঙ্গাকে তাদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন। গতকাল রবিবার(৯ মার্চ) মহামান্য হাইকোটের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর দ্বৈত বেঞ্চে এ আদেশ প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য রাঙামাটি পার্বত্য জেলার দশটি উপজেলা থেকে প্রতিনিধি না নেয়া এক সম্প্রদায় থেকে নিয়ে অন্য সম্প্রদায় বলা, হত্যা মামলার আসামীকে এবং একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে নিয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্নগঠন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়। এরই প্রতিবাদে রাঙামাটির জুড়াছড়ি, বরকল, কাউখালী ও রাজস্থলী উপজেলার জনসাধারণ মিছিল মিটিং স্বারকলিপি পেশ করে তাদের দাবি জানিয়ে আসছিলো।
পরবর্তীতে এ চার উপজেলা বাসীরপক্ষে এ্যাডভোকেট রাজীব চাকমা, জসিম উদ্দিন, পুলিন বিহারী চাকমা ও উথান মারমা মহামান্য হাইকোটে রিট করলে আজ রবিবার মহামান্য হাই কোর্ট থেকে এ আদেশ প্রদান করা হয়। রিটকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন হাইকোট বিভাগের আইনজীবি মোঃ সুলতাল উদ্দিন, নিবোলাস চাকমা, রতন কুমার।
প্রসঙ্গত, গত ৭ নভেম্বর সাবেক কৃষি কর্মকর্তা ও রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতির বড় ভাই কাজল তালুকদারকে চেয়ারম্যান মনোনীত করে ১৫ সদস্যের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন রাঙামাটি জেলা পরিষদ গঠন করে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পুনর্গঠিত পরিষদ সদস্যদের নাম প্রকাশের পর থেকেই আপত্তি ওঠতে থাকে। অন্তর্বর্তীকালীন জেলা পরিষদে কাউখালী, রাজস্থলী, বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলা হতে কাউকে প্রতিনিধি রাখা হয়নি। জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে কেবল ৬ উপজেলা থেকে চেয়ারম্যানসহ ১৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে কেবল রাঙামাটি সদর উপজেলা হতে ৯জন সদস্যকে রেওয়াজ বর্হিভুত ভাবে নিয়োগ দেওয়ায় শহরজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। একইসঙ্গে অভিযোগ উঠে গঠিত অন্তর্বর্তী পরিষদে সদস্যদের বেশির ভাগ পার্বত্য উপদেষ্টার ঘনিষ্ট আত্মীয় এবং আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগী দোসর। তাদের মধ্যে তাদের মধ্যে রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার মনোনীত সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক দুর্নীতিবাজ রেমলিয়ানা পাংখোয়ার বড় ভাই লাল ছোয়াক পাংখোয়ার স্ত্রী এবং ড্যানিয়েল লালমুয়ান সাং পাংখোয়া রেমলিয়ানার ভাই। দেবর-ভাবী দুজনকেই সদস্য নিয়োগ দিয়ে অন্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে। রাঙাবীকে তঞ্চঙ্গ্যা প্রতিনিধি বিবেচনায় সদস্য করা হলেও তিনি বৈবাহিক সূত্রে মূলত পাংখোয়া জনগোষ্ঠী সমাজের। রাঙাবী পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপের সাবেক কর্মস্থলের (ইউএনডিপি) সহকর্মী। রাঙাবী পাংখোয়া সম্প্রদায় বিয়ে করায় তিনি তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। তাই তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে অপর সদস্য প্রনতি রঞ্জন খীসা নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। তিনি হত্যা মামলার চার্জ শীটভুক্ত পলাতক আসামি। তার বিরুদ্ধে জি আর নং-৩১৯/ ২০১৮ মামলা রাঙামাটির আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।