রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে দুর্গম উপজেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম লংগদু। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন, যোগাযোগ ও শিল্পায়নের দিক থেকে পিছিয়ে থাকা এই জনপদে বিদ্যুৎ সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা দুই-এক দিনের নয় বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখানকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। অতীতের সরকারগুলোর আমলে এই সমস্যা আরও প্রকট ছিল, অনিয়ম ও দায়বদ্ধতাহীনতায় জর্জরিত বিদ্যুৎ বিভাগ যেন এই জনপদের মানুষের দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও, সামান্য ঝড়-বৃষ্টি কিংবা প্রতিকূল আবহাওয়ার অজুহাতে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীঘিনালা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সামান্য বাতাস কিংবা মেঘ দেখলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও গ্রাহকরা ফোন করলে নানা ধরনের অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কখনও লাইনে ত্রুটি, কখনও বা দীর্ঘ সময় ধরে মেরামতের নামে গ্রাহকদের শান্ত্বনা দেওয়া হলেও, দিনের পর দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয় না। একটি জনপদে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকা চরম অমানবিক। এই অভিশাপ থেকে মুক্তি কবে মিলবে, তা যেন অনিশ্চিত।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কফিল উদ্দিন এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, হালকা ঝড় বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া এবং দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া যেন এখানে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে। কিছুদিন আগেও হালকা বৃষ্টিতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। প্রায় ১৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুৎ না আসায়, তখন তিনি নিজে দীঘিনালা বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর পাননি। “দেব-দিচ্ছি” – এই ধরনের অস্পষ্ট উত্তর ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে তিনি চরম উদ্বিগ্ন এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা সদরে অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো বিদ্যুৎ না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত কার্যত অচল হয়ে পড়ে। স্কুল-কলেজের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে, দেশজুড়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষার সময় এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট পরীক্ষার্থীদের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসহনীয় গরমে বিদ্যুৎবিহীন জীবনযাত্রা অসুস্থ, বৃদ্ধ ও পরীক্ষার্থীদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা এই বিদ্যুৎ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান চান।
একই চিত্র রাঙামাটির আরেক বৃহৎ উপজেলা বাঘাইছড়িতেও। সেখানেও দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায়, পুরো উপজেলা অন্ধকারে নিমজ্জিত ও দুর্ভোগে পড়ে যাওয়া যেনো নিত্য দিনের সঙ্গী। বাঘাইছড়িতে বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন থাকা সত্ত্বেও স্থানীয়রা যথাযথ বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সামান্য বাতাস এলেই চলে যায় বিদ্যুৎ এবং একবার গেলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দেখা মেলে যেনো বড়ই দায়। বছরের পর বছর ধরে এই ভোগান্তি এখানকার মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন থাকার পরেও কেন এমন পরিস্থিতি, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দীর্ঘদিনের এই বিদ্যুৎ সমস্যা লংগদু ও বাঘাইছড়ির জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই স্থানীয়রা অবিলম্বে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান, যাতে তারা একটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।