“শ্রমিক-মালিক এক হয়ে গড়বো এদেশ নতুন করে”—এই প্রতিপাদ্যে রাঙামাটিতে পালিত হয়েছে মহান মে দিবস ও জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস। বৃহস্পতিবার (১ মে) সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আলোচনা সভায় মিলিত হয় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে।
আলোচনা সভায় শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, পেশাগত নিরাপত্তা, এবং সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে অভিযোগ করেন, প্রতি বছর মে দিবসের আনুষ্ঠানিকতা পালিত হলেও পরদিন থেকেই এসব আলোচনা হারিয়ে যায়। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে বিআরটিএ অফিসসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন স্তরে শ্রমিকদেরকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। এছাড়াও শ্রম আইন সংশোধন, বেতন কাঠামোর স্বচ্ছতা, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কার্যকর ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
সভায় জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিব উল্লাহ শ্রমিকদের সমস্যার প্রতি একাত্মতা জানিয়ে বলেন, আমাদের হাতে যেসব বিষয় রয়েছে, তা নিয়ে আমরা কাজ করবো। আর যেগুলো আমাদের এখতিয়ারে নেই, সেগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও উপদেষ্টাদের কাছে তুলে ধরা হবে। এসময় তিনি বলেন, “হয়রানি শুধু বিআরটিএতে নয়, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরেই রয়েছে—এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমাদের সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।” তিনি আরও বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের বড় কারণ সময়মতো মজুরি না দেওয়া। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহারের আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মাহমুদ খান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ মোবারক হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. নুয়েন খীসা, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।
সভায় বক্তারা বলেন, ১৮৮৬ সালের ১মে শিকাগোর হে মার্কেটের আত্মাহুতি শুধু ইতিহাস নয়, এটি শ্রমিক অধিকারের লড়াইয়ের প্রেরণা। সেই আত্মত্যাগের চেতনায় আজও শ্রমিক সমাজ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার। তাই মে দিবস শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামের প্রতীক—যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ছে অধিকার ও মর্যাদার বার্তা নিয়ে।