ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমাকে উপদেষ্টা করায় পাহাড়িদের একাংশে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সুপ্রদীপসহ তিন উপদেষ্টার শপথ আজ (রোববার) হতে পারে বলে জানা গেছে। পাহাড়িদের একটি অংশের বিরোধিতার মুখেই শপথ নিচ্ছেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। এর আগে তিনি জৈষ্ঠ সচিব মর্যাদার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।
এদিকে সুপ্রদীপ চাকমাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা করায় চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের সহধর্মিনী রাণী য়েন য়েন রায়ের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীসহ পাহাড়িদের একটি অংশ তার বিরোধিতা করে আন্দোলনে নেমেছেন। তারা উপদেষ্টা সুপ্রদীপকে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ আখ্যায়িত করে তাকে সরানোর দাবিতে শুক্রবার (৯ আগষ্ট) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্লে-কার্ড, ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন। এ সময় অবিলম্বে সুপ্রদীপকে সরিয়ে তাদের সঙ্গে বসে অন্য একজনকে উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এছাড়াও ফেসুবকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে দাবিটি জোরালো করা হচ্ছে। এসব স্ট্যাটাসে সুপ্রদীপ চাকমাকে সরিয়ে রাঙামাটির চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, সাবেক রাঙামাটি জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান ও অধ্যাপক মংসানু মারমা- এ তিনজনের মধ্যে যে কোনো একজনকে উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি জানানো হয়েছে। এ আন্দোলনে আদিবাসী শিক্ষার্থীসহ একাধিক সংগঠন সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।
ওই মানববন্ধনে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। সুপ্রদীপ চাকমাকে আওয়ামী লীগের দালাল আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তাকে সরিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহসভাপতি রেং ইয়ং ম্রো বলেন, আদিবাসীদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা না করেই তাদের প্রতিনিধি ঠিক করা আদিবাসীদের সঙ্গে একধরনের মশকরা। আমরা এতদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে দেশকে নতুন করে স্বাধীন করেছি, কিন্তু নতুন সরকার এসেই আমাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী একটা আচরণ করেছে। আমরা চাই আদিবাসীদের যেসব সংগঠন ও বিশিষ্টজন আছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রতিনিধি নির্বাচন করা হোক।
রাঙামাটির চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রাণী য়েন য়েন বলেন, ৯ আগষ্ট আদিবাসী দিবস আমাদের কাছে মহৎ একটা দিন। কিন্তু এদিনেই আমাদের সঙ্গে নতুন সরকার মশকরা করছে। যেই ব্যক্তিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি করা হয়েছে, তিনি সব সময় ‘জ্বি স্যার’ করার লোক। তিনি কখনই আমাদের হয়ে কিছুই করতে পারবেন না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করতে পারবেন না। তাই আমরা চাই সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমাদের প্রতিনিধি ঠিক করা হোক। এর বাইরে যদি এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, যিনি আওয়ামী লীগ সরকারেরই আজ্ঞাবহ, তাহলে আমরা মেনে নেব না। তিনি যদি শপথও নেন, তারপরও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, তারা কী কারণে আমার বিরোধিতা করছেন তা আমার কিছুই জানা নেই। সেটা তাদের বিষয়। আমি তো উপদেষ্টা হতে চাইনি। আমাকে যে উপদেষ্টা করা হয়েছে, তাও জানা ছিল না। পরে তা আমাকে জানানো হলে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাতে সম্মতি প্রকাশ করেছি। ১১ আগষ্ট যে কোনো সময় আমিসহ তিনজন উপদেষ্টার একসঙ্গে শপথগ্রহণ হতে পারে বলে আমাকে প্রস্তুত থাকতে জানানো হয়েছে।