রবিবার , ৩০ নভেম্বর ২০২৫ | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. জাতীয়
  2. রাঙামাটি
  3. খাগড়াছড়ি
  4. বান্দরবান
  5. পর্যটন
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. রাজনীতি
  8. অর্থনীতি
  9. এনজিও
  10. উন্নয়ন খবর
  11. আইন ও অপরাধ
  12. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
  13. চাকরির খবর-দরপত্র বিজ্ঞপ্তি
  14. অন্যান্য
  15. কৃষি ও প্রকৃতি
  16. প্রযুক্তি বিশ্ব
  17. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
  18. শিক্ষাঙ্গন
  19. লাইফ স্টাইল
  20. সাহিত্য
  21. খোলা জানালা

প্রকৃতিনির্ভর কৃষিতে পাহাড়ের কৃষকদের সফলতার গল্প

প্রতিবেদক
মোঃ আক্তার হোসেন, খাগড়াছড়ি
নভেম্বর ৩০, ২০২৫ ৬:৩৩ অপরাহ্ণ

দীঘিনালায় এনবিএস কৃষি মডেলে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। পাহাড়ের ঢালে সবুজ বাঁধাকপির সমারোহ, একপাশে বেগুন, অন্যপাশে শশা আর ক্ষীরার ক্ষেত। রাসায়নিক সার ছাড়াই প্রকৃতিনির্ভর পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে নতুন স্বপ্ন দেখছেন দীঘিনালার কৃষকরা। ICIMOD-এর সহায়তায় এবং Helvetas Bangladesh-এর কারিগরি সহায়তায় তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা বাস্তবায়িত ‘প্রমোটিং জিইএসআই রেসপনসিভ নেচার-বেসড সল্যুশনস ফর এনাব্লিং রেসিলাইন্স ইন চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস’ প্রকল্পের মাধ্যমে এই পরিবর্তন আসছে।

সরেজমিনে দীঘিনালার বড়াদম ও হেডম্যান পাড়া এলাকায় এনবিএস (নেচার-বেসড সল্যুশনস) “রাসায়নিক সার ছাড়াই এখন ভালো ফসল” বড়াদম পাড়ার কৃষক উদাসী চাকমা তার জমিতে বাঁধাকপি লাগিয়েছেন তিনি বলেন, জুম চাষ করতাম, জমিতে রাসায়নিক সার দিতাম, কিন্তু খরচ বেশি হতো। তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার এই প্রকল্পের মাধ্যমে এনবিএস পদ্ধতি শেখার পর আমাদের জীবনে বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন রাসায়নিক সার ছাড়াই ভালো ফসল হচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্যও ভালো থাকছে। বাঁধাকপির ক্ষেতে এবার অনেক ভালো ফলন হয়েছে।”

একই এলাকার কৃষক উদয়ন চাকমা জানান, “কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি জৈব সার তৈরি করতে শিখেছি। এখন খরচ অনেক কম হচ্ছে, কিন্তু লাভ বেড়েছে। আগে যেখানে রাসায়নিক সার কিনতে অনেক টাকা খরচ হতো, এখন নিজেই জৈব সার বানাতে পারি। পরিবেশও ভালো থাকছে। আমার বাঁধাকপি ক্ষেত দেখে এলাকার অনেক কৃষক এই পদ্ধতিতে আগ্রহী হচ্ছেন।”

“বাজারে জৈব সবজির চাহিদা বেশি” বড়াদম পাড়ার কৃষক নয়ন জ্যোতি চাকমা তার বেগুন ক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “এনবিএস পদ্ধতিতে চাষ করে আমি এখন নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছি। বাজারে জৈব সবজির চাহিদা অনেক বেশি। ক্রেতারা জানেন যে এতে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক নেই, তাই তারা বেশি দাম দিতেও রাজি। আমার পরিবারের আয় অনেক বেড়েছে। Helvetas Bangladesh এবং তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে আমরা যে সহায়তা পাচ্ছি, তা সত্যিই জীবন বদলে দিয়েছে।”

নারী কৃষকের ক্ষমতায়ন হেডম্যান পাড়ার নারী কৃষক তুহিনা চাকমা আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আমরা নারীরা যে কৃষিতে এগিয়ে আসতে পারি এবং পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি, এই প্রকল্প আমাদের সেই আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। ক্ষীরা চাষ করে আমি এখন পরিবারের আয়ের একটা বড় অংশ যোগান দিতে পারছি। কমিউনিটি লার্নিং সেন্টারে আমরা নারীরা মিলিত হই, একসাথে শিখি এবং একে অপরকে সহায়তা করি। এটা শুধু আর্থিক স্বাবলম্বিতা নয়, সামাজিক মর্যাদাও বাড়িয়েছে।”

হেডম্যান পাড়ার আরেক কৃষক ইমেজ চাকমা তার শশা ক্ষেত দেখিয়ে বলেন, “প্রথমে অনেক ভয় ছিল—রাসায়নিক সার ছাড়া ফসল হবে কি না। কিন্তু প্রকল্পের লোকাল সার্ভিস প্রোভাইডাররা নিয়মিত এসে পরামর্শ দিয়েছেন, সাহস দিয়েছেন। এখন দেখুন, কত সুন্দর ফসল হয়েছে। আমি এখন অন্য কৃষকদেরও এই পদ্ধতি শেখাতে চাই।” “টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলছি”

তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুইচিং অং মারমা বলেন, “ICIMOD-এর সহায়তায় এবং Helvetas Bangladesh-এর কারিগরি সহায়তায় আমরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। এনবিএস শুধু ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিই করছে না, পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়ও গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা দেখেছি, কৃষকরা যখন প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চাষাবাদ করেন, তখন তাদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশও সুরক্ষিত থাকে। মাটির উর্বরতা বাড়ে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে কৃষকরা লাভবান হন। কমিউনিটি লার্নিং সেন্টারগুলো এক্ষেত্রে কৃষকদের জন্য জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে নারী কৃষকদের ক্ষমতায়নে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। জেন্ডার সংবেদনশীল এই কর্মসূচি নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছে।”

“সফল মডেল সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই” Helvetas Bangladesh-এর প্রতিনিধি ও মাঠ সমন্বয়ক দীপ্তিময় চাকমা বলেন, “আমরা ICIMOD-এর সহায়তায় এবং তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এনবিএস একটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যা স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটায়। পার্বত্য অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও জলবায়ু বিবেচনায় এনবিএস সবচেয়ে উপযুক্ত সমাধান।”

তিনি আরও জানান, “এখানে মাটির ক্ষয় রোধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পানি ব্যবস্থাপনা—সব কিছুতেই প্রকৃতিনির্ভর পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রাখছে। কৃষকরা যে সফলতা পাচ্ছেন, তা দেখে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। সরকারি বিভাগ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে আমাদের নিয়মিত সমন্বয় রয়েছে। আমরা চাই এই সফল মডেল সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে এবং সরকারের নীতি ও বাজেটে এনবিএস অন্তর্ভুক্ত হোক যাতে আরও বেশি কৃষক এর সুফল পান।”

দীঘিনালার সবুজ পাহাড়ে এনবিএস মডেলের এই সফলতা এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য এলাকার কৃষকদের জন্যও অনুপ্রেরণা। ICIMOD, Helvetas Bangladesh এবং তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার এই যৌথ উদ্যোগ প্রমাণ করছে যে, প্রকৃতির সাথে সহাবস্থান করেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।

সর্বশেষ - আইন ও অপরাধ

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: