আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, পাহাড়ে কঠোর হস্তে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা হবে। সন্ত্রাস আর শান্তি একসঙ্গে চলতে পারে না। অবৈধ অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাস বেশি দিন টিকতে পারে না। অস্ত্র দিয়ে পৃথিবীর কোথাও শান্তি আসেনি। পার্বত্য অঞ্চলেও তা কখনও সম্ভব হবে না। তাই এখনও সময় আছে, অস্ত্র ছেড়ে শান্তির পথে এগিয়ে আসুন। পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রতি কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে এসব কথা বলেন হানিফ।
তিনি আজ সোমবার রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সভায় দলটির জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ তৃণমূলের নেতারা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বরসহ দলটির তৃণমূলের নেতারা বলেন, পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারীদের আধিপত্য, চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণসহ বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ কারও শান্তি নেই। সবক্ষেত্রে তাদের চাঁদাজিতে মানুষ অতিষ্ঠ। তাদের অবৈধ অস্ত্রের হুমকির মুখে জিম্মি পাহাড়ের মানুষ। পাহাড়ি লোকজনকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে বাধা দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ ১৭ মার্চ রাতে খোদ রাঙামাটি শহরেই সদর উপজেলা ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক জয় ত্রিপুরাকে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। অবিলম্বে জয় ত্রিপুরা হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার দাবি করেছেন রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের এসব বক্তব্যে দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাদারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, শেষ অনুরোধে বলছি- পার্বত্য অঞ্চলে যারা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন দল করছেন এবং মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-খারাবি করে সন্ত্রাস চালাচ্ছেন আপনারা দ্রুত অস্ত্র ছাড়ুন। না হয় কঠোর অভিযান পরিচালিত হবে। তখন কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারবনে না। কেউ টিকে থাকতে পারবেন না। পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাস দমনে সরকার সর্বোচ্চ পদক্ষেপের পরিকল্পনা নিয়েছে।
হানিফ বলে, বিএনপি-জামায়াত ইসলামিসহ দেশের সব জঙ্গিগোষ্ঠীর সন্ত্রাস সরকার কঠোর হস্তে দমন করেছে। রাঙামাটিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামেও সব সন্ত্রাসীকে সমূলে নির্মূল করা হবে। এজন্য যাতে সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। যে কোনো মূল্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে। সরকার ইতোমধ্যে পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ কঠোর হস্তে সন্ত্রাস নির্মূলের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তাই এখনও সময় আছে, যারা পাহাড়ে এখনও অস্ত্র নিয়ে মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন- আপনরা দ্রুত অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে শান্তির পথে এগিয়ে আসুন। সন্ত্রাস করে কখনও টিকে থাকতে পারবনে না। ইতোমধ্যে যারা পার্বত্য এলাকায় হত্যাকান্ডে জড়িত হয়েছে তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। পাহাড়ে মেঘ কেটে যাবে, চাঁদের হাসি আসবে।
আগামী ২৪ মে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সময়সূচি ঘোষণা করে তার আগেই মেয়াদোত্তীর্ন সব কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করতে জেলা কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন হানিফ।
সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু শহরের রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে আয়োজিত জেলা আওয়ামী লীগের দিনব্যাপী তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি।
এতে প্রধান বক্তা ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। এছাড়া ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমিন প্রমুখ বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।