রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমিতে নতুন উদ্ভাবিত ধানের জাত ব্রি ৮১ ও ব্রি ৯২ জাতের ধান চাষ করে সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI- ব্রি)।
জলেভাসা জমিতে এ জাতের ধানের হাইব্রিড ধানের কাছাকাছি ফলন হয়েছে। সফলতা আসায় দেশীয় এ ধান সম্প্রসারণে কাজ শুরু করা হবে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, গত বোরো মৌসুমে রাঙামাটির বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নের মিতিংগা ছড়িতে জলভাসা জমিতে ২ হেক্টর জমিতে ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ উদ্ভাবিত ধান জাত ব্রি ৮১ ও ব্রি ৯২ ধান চাষ হয়।
সম্প্রতি ধান ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় ধানের ফলন বেশ ভাল হয়েছে। কৃষকরা বলছেন এ ধানের ফল হাইব্রিড ধানের কাছাকাছি ফলন হয়েছে।
কৃষক শরৎ কুমার চাকমা (৫৫) বলেন, তিনি ১ হেক্টর জমিতে ব্রি ৮১ ও ব্রি ৯২ দুটোই চাষ করেছেন। দুটোর ফলন বেশ ভাল হয়েছে। যে জমিতে তিনি সাধারণ অন্যান্য দেশী ধান চাষ করতেন।সেসব ধানের চেয়ে এ ধান দুটোর প্রায় দ্বিগুন ফলন হয়েছে।
রাজিব হোসেন (৩৫) বলেন, তিনি এক কানি (৪০ শতক) জমিতে ব্রি ৯২ ধান চাষ করেছেন। ফলন বিগত বছরের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। বলেন, আগামী বোরো মৌসুমেও এ ধান চাষ করব।
রাজিব বলেন, হাইব্রিড ধান থেকে বীজ সংগ্রহ করা যায় না। এ ধান থেকে বীজ সংগ্রহ করে রাখা যাবে। এটা আমাদের মত গরীব কৃষকদের জন্য ভাল।
সুবলং এলাকার কৃষি উপ সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমার ব্লকে চাষ করা ব্রি ৮১ ও ব্রি ৯২ দুটোই বেশ ভাল ফলন হয়েছে। অন্যান্য দেশী জাতের চেয়ে এ ধান প্রায় দ্বিগুন ফলন হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে নতুন এ ধান জাতের ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৯ মেট্রিক টন। ধানের মেয়াদ কাল ১৪০ থেকে ১৪৫ দিন।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, কাপ্তাই জলেভাসা জমিতে সাধারণত বিভিন্ন দেশী জাতের ধান চাষ করে থাকেন কৃষকেরা। এতে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলন না হওয়ায় হাইব্রিড ধানের উপর নির্ভরশীল হয় কৃষকরা। কিন্তু হাইব্রিড ধানের বীজ না পাওয়ায় প্রতি বছর বেকায়দায় পড়েন গরীব চাষীরা। এ ধান চাষ করলে আর বীজের জন্য দু:চিন্তা করতে হবে না। পাশাপাশি ধান চাষের মাধ্যেমে কাপ্তাই হ্রদের সকল জলেভাসা জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহা পরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির বলেন, আমরা রাঙামাটির জলেভাসা জমিতে ধান জাত দুটির পরীক্ষামুলক চাষ করেছি। ফল দেখে আমরা অবাক হয়েছি। অভাবনীয় ফলন হয়েছে। এ জাত সম্প্রসারণের কাজ শুরু করব আমরা। এ ধান চাষের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা পতিত জমি চাষের আওতায় আনা যাবে।
তিনি বলেন, ব্রি ৮১, ব্রি ৯২ স্বাদে ভাল হওয়ার পাশাপাশি এ চাল জিংক সম্মৃদ্ধ বলেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।
এ ধানের জাত কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমিতে সম্প্রারণের উদ্যোগ করা হবে জানালেন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ পার্বত্যাঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বলেন, আমরা পাহাড়ে এ ধান জাত সম্প্রসারণের কাজ শুরু করব। তিনি বলেন ভাল ফলনের আশায় অনেক কৃষক হাইব্রিড ধান চাষ করেন। কিন্তু এ ধানের ভাত স্বাদে ভাল না হওয়ায় দেশী জাতের ধান চাষ করে থাকেন পাহাড়ের চাষীরা।