ভোটার তালিকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য দেয়া শর্ত বাতিল ও সময় বৃদ্ধির দাবী জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।
আজ সকালে এ দাবিতে রাঙামাটি শহরের রেইনবো রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চলমান ভোটার তালিকা হাল নাগাদ কার্যক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) জন্য দেয়া শর্ত বাতিল ও হাল নাগাদের সময়সীমা বৃদ্ধির দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠন “পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ” কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা রইলো।
গত ২০মে ২০২২ থেকে আগামী ৯জুন ২০২২ পর্যন্ত সারা দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হয়েছে। সারা দেশের ন্যায় তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায়ও এ কার্যক্রম চলমান রয়েছ। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি যে, ভোটার তালিকা হাল নাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে পার্বত্য এলাকার বাসিন্দাদের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে আলাদা কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে।
বিশেষ করে স্থায়ী বাসিন্দা প্রমানের জন্য পৌরসভা বা ইউপি চেয়ারম্যানের সনদের বাইরে পাহাড়িদের প্রথাগত নেতৃত্ব হেডম্যান/কার্বারীর সনদ এবং জায়গার সনদ চাওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আমরা মাঠ পর্যায়ে খবর নিয়ে জানতে পারি, এ দুটি শর্তের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বহু মানুষ ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হতে পারছে না। কেননা স্থায়ী বাসিন্দার ক্ষেত্রে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ মানুষের কাছে নিজস্ব রেকর্ডিয় জায়গা না থাকায় জায়গার সনদ নেই।
জায়গা না থাকায় পাহাড়িদের প্রথাগত নেতৃত্ব হেডম্যান কার্বারীরাও এসব বাসিন্দাদের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রত্যয়নপত্র/সনদ দিচ্ছে না। এ অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষ নির্বাচন কমিশনের দেয়া এ দুটি শর্ত মানতে পারছে না বিধায় তারা ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হতে পারছে না। অথচ বাদ পড়তে যাওয়া এসকল মানুষ ও তাদের আত্মীয় স্বজন দীর্ঘদিন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করে আসছে। এ পরিস্থিতির শিকার বেশিরভাগ মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত অ-উপজাতি তথা বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির।
বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘ বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বন্দোবস্তি বন্ধ রেখেছে সরকার। এ ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন আইনের কারণে এখানে জমি বেচাকেনাতেও রয়েছে নানা জঠিলতা। এ কারণে এখানে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাসরত বাঙ্গালীদের খাস দখলীয় জমি থাকলেও তাদের জমির কোন রেকর্ডপত্র হাতে নেই।
এখানে বসবাসরত বেশিরভাগ বাঙ্গালী হত দরীদ্র ও ভূমিহীন। এছাড়াও স্থানীয় পাহাড়িদের নেতৃত্ব হেডম্যান/কার্বারীরা পাহাড়িদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের চাপের মুখে বাঙ্গালীদের স্থানীয় বাসিন্দার প্রত্যয়ন পত্র দিতে রাজি হচ্ছেন না। এ অবস্থায় চলমান ভোটার তালিকা হাল নাগাদ কার্যক্রমে নতুন করে বহু বাঙ্গালী বাসিন্দা ভোটার হওয়ার মতো নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় বাঙ্গালীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
উল্লেখিত বিষয় বিবেচনা করে, চলমান ভোটর তালিকা হাল নাগাদ কার্যক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য আলাদা করে দেয়া শর্ত বাতিল পূর্বক এ অঞ্চলের হাল নাগাদ কার্যক্রমের সময়সীমা কমপক্ষে আরো ১০ দিন বাড়ানোর জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা স্বাধীন দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের ভোটার হওয়ার মতো মৌলিক অধিকার রক্ষায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন সচেষ্ট হবে। অন্যথায় ভোটার হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত পার্বত্যবাসীকে সাথে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ শাব্বির আহম্মেদ, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিঃ যুগ্ন সম্পাদক মোঃ সোলায়মান, উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ন সম্মাদক মোঃ আবু বকর সিদ্দীক, সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিঃ সহ-সভাপতি মোঃ হাবিব আজম, উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদা আক্তার প্রমুখ।