খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গোলাবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ গঞ্জ পাড়ার এম এ হক সড়ক সংলগ্ন ছড়াটি সরাসরি চেঙ্গী নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা বানের পানি এই ছড়া দিয়ে নেমে চেঙ্গী নদীতে গিয়ে পড়ে। এতে আশপাশের কয়েকটি পরিবার বন্যামুক্ত থাকে। কিন্ত ইদানিং কিছু প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে ছড়া দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে বসতভিটাসহ দোকানপাট।
সরেজমিন দেখা গেছে, চেঙ্গী নদীর পাশে দক্ষিণ গঞ্জ পাড়ার ছড়াটির মাঝখানেই পিলার বসিয়ে সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে সামাজিক বৈঠক খানার ঘর। গোলাবাড়ি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের গঞ্জ পাড়ায় অংশে পরিবেশ বিধ্বংসী এই ভয়াবহ অপতৎপরতা চললেও প্রশাসনের কোনো ধরনের নজরদারিও নেই। এতে ছড়ার ওপর গত তিনমাস ধরে চলছে ভবন নির্মাণের কাজ। এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
ছড়ার মাঝখানে ভবন নির্মাণের খবর পেয়ে সরেজমিন গেলে কথা হয় স্থানীয় চায়ের দোকানের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। এ সময় তারা খালটিকে দখল করে সেখানে ভবন নির্মাণ করায় বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এতে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, তাদের বাপ-দাদার আমলে এখানে কোন খাল ছিল না। ইদানিং জনবসতি থাকার হওয়ার ফলে ছড়া তৈরি করে চেঙ্গী নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। কিন্তু বর্তমানে এই ছড়াটিকে দখল করে গিলে খাচ্ছে প্রভাবশালীরা। দিন দিন দুই তীর দখল করে ফেলায় খালের প্রশস্ততাও কমে এসেছে।
তারা আরো বলেন, এতদিন দুই তীর দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও এবার সরাসরি খালের মাঝখানে পিলার বসিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ভবন। এতে চলতি বর্ষা মৌসুমে অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা বানের পানি ভাটির দিকে আর নামতে পারবে না। এই অবস্থা হলে ডুবে যাওয়ার আশংকা স্থানীয়দের।
তবে গোলাবাড়ী ইউপির ২নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার জয়নাল আবেদীন মাসুম বলছেন, সামাজিকভাবে বৈঠক করে স্থানীয়দের বিচার সালিশের জন্য একটি সালিশ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে এখানে। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আকতার ভাইও জানে। তিনি নিজেও এই কাজের জন্য ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন। আমি নিজে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি।
এদিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, সামাজিকভাবে বিচার-সালিশের জন্য কোনো স্থান নেই, কেউ জায়গা দেয় না। তাই সমাজের সবার সম্মতিতে সালিশ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় জাবেদ ও মাহবুবুল আলম বলেন, ছড়া দখলের কোনো বিধান নেই। এছাড়াও যেখানে বিচার-সালিশের জন্য সরকার ইউনিয়ন পরিষদ তৈরি করেছে সেখানে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোনো ভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। সামাজিকভাবে বৈঠকের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে তা মোটেও সত্য নয়।
একই সঙ্গে একটি সিন্ডিকেট চক্র দখল কাজে জড়িত বলে দাবি এলাকাবাসীর। এছাড়াও সালিশ কেন্দ্র করার খুব বেশি প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে জায়গা কিনে সেখানে করা হোক।
ভবন নির্মাণের আগে সরকারি কোনো দপ্তর থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কী-না এমন প্রশ্নে স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, ‘সামাজিক সংগঠনের ভবন নির্মাণ করতে হলে কোনো অনুমোদন নিতে হয় না। তাছাড়া এটি মাত্র একতলা ভবন নির্মাণ হবে।’
পরিবেশবাদী যুব সংগঠন- গ্রীন ভয়েস’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি চারু বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, এলাকাটি এমনিতে নিম্নাঞ্চল। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে সাধারণ লোকজন দুর্ভোগে পড়বে। প্রশাসনের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, এটি মারাত্মক অপরাধ কার্যক্রম। এ ব্যাপারে প্রশাসনের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি। বর্তমানে ছড়া পাশাপাশি অনেক প্রাকৃতিক খাল-বিলও পরিণত হয়েছে মানুষের আবাস ভূমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। জলাশয়ের বিলুপ্তির কারণে সব দিক থেকেই ক্ষতির মুখে পড়ছে সাধারণ লোকজন।
স্থানীয় গোলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উল্লাস ত্রিপুরা বলেন, ছড়া দখলের বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে ছড়ায় কোনো ধরনের স্থাপনা করতে বারণ করা হয়েছে। এরপরও কথা না শুনলে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।