রাঙামাটির বরকল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ইউইও) মো আব্দুস সালাম বরকল উপজেলার এক বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা দাবী করার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সেখানে ইউইও এক প্রধান শিক্ষককে তার বিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষক সরিয়ে নতুন দুজনকে নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছে থেকে ৮ লাখ টাকা আদায় করে দেওয়ার পরামর্শ দেন।
অডিওতে মো আব্দুস সালাম ঐ শিক্ষকে ফোন করে শুরুতে নিজের পরিচয় দেন। এরপর ঐ শিক্ষকের অবস্থান জানতে চান সালাম।
এরপর বলেন, সর্বশেষ খবর কি? এখন কি করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে ঐ শিক্ষক বলেন, স্যার কিভাবে দেব? আমাদের পক্ষে ৮ লাখ টাকা দেওয়া সম্ভব না স্যার। আমাদের তো চোখের পানি ঝড়ছে। এখন কি করব স্যার?
জবাবে, আব্দুস সালাম বলেন, আমি তো আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে যা বলার বলেছি। এখন সেটা আপানাদের বিষয়। আমি এ বিষয়টা শুনার জন্য আপনাকে ফোন দিলাম।
জবাবে ঐ শিক্ষক আব্দুস সালামের কাছে আরো সময় চান। সময় অনেক দেয়া হয়েছে দাবী করে আব্দুস সালাম বলেন, আপনি যেহেতু পারতেছেন না আপনার মত আপনি থাকেন, আমি আমার মত করে চললাম। আব্দুস সালামের কথা শুনে ঐ শিক্ষক ৮ লাখ টাকা থেকে কিছু কমানোর জন্য অনুরোধ করেন।
শিক্ষকের কথা শুনে ক্ষেপে গিয়ে আব্দুস সালাম বলেন, আরে আপনি তো কোন কিছু করতে পারেন না। আপনি করেন মেম্বারী। আপনি তো স্কুলটি চালান না। আমি শুনেছি তো আপনার কথা। স্কুলটারে ধংস করে ফেলেছেন। খালি ফাইল নিয়ে ঘুরাফেরা করলে হবে? বাচ্চাদের পড়াশুনা করান না।স্কুলটি চলে নয় ছয় করে। ভাঙাচোরা একটি ঘর। এ হল আপনার অবস্থা।
এক পর্যায়ে ঐ শিক্ষক সালামের কাছে পরামর্শ চান তাহলে এখন কি কবর স্যার?
পরামর্শ দিতে গিয়ে সালাম বলেন, আমি আপনাকে যা বলার বলেছি কিন্তু আপনি হা না কোন কিছু জানালেন না।
এখন আমি আমার মত করে চলবো। আপনার তো কোন কিছুই সম্ভব না। সম্ভব কোনটা বলেন? এখন তাহলে ওখানে দুজন শিক্ষক নেন। তাহলে তো সমাধান হয়ে যায়।
পরামর্শ শুনে ঐ শিক্ষক বলেন, স্যার দুজন শিক্ষক সরিয়ে দিব? আমি কিভাবে সরিয়ে দিব স্যার? এটা তো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। এ কথা শুনে সাথে সাথে সালাম বলেন হ্যাঁ তাহলে সেটা করে দিচ্ছি। কিন্তু আপনি তো কোন মতামত দিলেন না।
শিক্ষক তখন বলেন, এত বছর কাজ করতেছি কিভাবে এদের সরাব? এ কথা শুনে আব্দুস সালাম বলেন, ঠিক আছে বুঝছি। আপনি আপনার মত করে কাজ করেন বলে ফোন কেটে দেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঐ শিক্ষক বরকল উপজেলার আইমাছড়া ইউনিয়নের রামুক্যাছড়ি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রসিক কুমার চাকমা।
এ বিষয় মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় ৪ জন শিক্ষক মিলে স্কুলটি ধরে রেখেছি। ২০১১ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। বর্তমানে ৫০ জনের উপর ছাত্রছাত্রী আছে। আমরা শিক্ষকরা বিনা বেতনে ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছি। সরকারী বেসরকারী কোন অনুদান নেই আমাদের।
আমাদের দু:খের কথা ভাগাভাগী করতে ও আমাদের ভবিষ্যতের খবর জানতে বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক গত ২২ ফেব্রুয়ারী সকালে রাঙামাটির রিজার্ভ বাজারে ইউইও সালাম স্যারের অফিসে যাই।
কথা বলা শেষে বাকী দুজন শিক্ষককে বাইরে পাঠিয়ে আমার সাথে আলাদাভাবে কথা বলেন ইউইও।
সেখানে তিনি বলেন, আপনাদের পদগুলো ঠিক রাখতে প্রতি জনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা দরকার। এগুলো উপরে পাঠাতে হবে। এ টাকাগুলো তিন দিনের মধ্যে জোগাড় করে দিতে বলেন।
তিনদিনের মাথায় আমরা রামুক্যাছড়ি ফেরার পথে সকাল ৭টা ২৪ মিনিটে তিনি আমাকে ফোন দিয়ে টাকা জোগাড়ের আপডেট খবর জানতে চান। আমরা টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় দুজনকে সরিয়ে নতুন দুজন খুঁজে তাদের কাছে টাকা নিয়ে তাকে দেওয়ার পরামর্শ্ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস সালাম বলেন, অডিওটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে নিরত নামের বরকলের একজন সাংবাদিক। তারে চিনেন? আমি তারে দেখে ছাড়ব। এর আগে এভাবে একজনকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে সে নজির আছে। তারে চিনেন? নিরোত এডিট করে এটি করেছে। বিষয়টি আসলে সেটা না।
আমি তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করব। লেখা রেডি করেছি। একটু পড়ে দেখবেন? শিগগির মামলা করব। তখন একটু সহযোগীতা করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অডিও ক্লিপটি আমাদের কাছে এসেছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করেছি। সত্যতা পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে আমরা আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেছি।