রবিবার , ১৬ জুলাই ২০২৩ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. জাতীয়
  2. রাঙামাটি
  3. খাগড়াছড়ি
  4. বান্দরবান
  5. পর্যটন
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. রাজনীতি
  8. অর্থনীতি
  9. এনজিও
  10. উন্নয়ন খবর
  11. আইন ও অপরাধ
  12. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
  13. চাকরির খবর-দরপত্র বিজ্ঞপ্তি
  14. অন্যান্য
  15. কৃষি ও প্রকৃতি
  16. প্রযুক্তি বিশ্ব
  17. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
  18. শিক্ষাঙ্গন
  19. লাইফ স্টাইল
  20. সাহিত্য
  21. খোলা জানালা

বরকলে ২৬টি স্কুলে জোড়াতালির সংস্কার কাজ শেষ; দুর্নীতিমুক্ত অফিসার চান শিক্ষকরা

প্রতিবেদক
হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
জুলাই ১৬, ২০২৩ ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ

রাঙামাটির বরকল উপজেলার সাবেক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালামের নামটি শুনলে এখনো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান বরকলের প্রাথমিক শিক্ষকরা। এতদিন ভয়ে কোন কিছু বলেননি। সালামের ভয়ে অনেকে মিথ্যা বলেছেন। সালামকে বদলী করা হয়েছে তাই এখন কথা বলেন শিক্ষকরা।

সম্প্রতি বরকল উপজেলায় বড় হরিণা, ভুষণছড়া আইমা ছড়া, বরকল সদর ও সুবলং ইউনিয়নের বিদ্যালয়ে দায়িত্বরত শিক্ষকদের সাথে কথা বলে এমন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়।

শিক্ষকদের একটাই দাবী বরকলের সুনাম ফেরানো ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকে ঠিক করতে উপজেলায় যেন একজন সৎ শিক্ষা অফিসার পদায়ন করা হয়।

এখানে নতুন করে কাউকে শাস্তিমুলক বদলী হিসেবে পদায়ন করা হলে বরকলের শিক্ষা ব্যবস্থা আরো আগের মত চলে যাবে।

আইমাছড়া ইউনিয়নের নিকসেন্দ্রা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো হারুন অর রশীদ বলেন, আব্দুস সালামের মত দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা অফিসার যেন আমাদের বরকলে পোস্টিং দেয়া না হয় এখন সেটা চাই। দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসার পোস্টিং দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। এ বিভাগের সাথে যারা জড়িত তারা অনিয়ম করতে বাধ্য হয়। এ কথা তারা কোথাও বলতে পারে না।

সর্বশেষ শিক্ষা অফিসার কোন শিক্ষককে অফিস খোলার দিনে বাজারে বা কোথাও দেখলে তাকে ভয় দেখিয়ে ২০-৩০ হাজার টাকা আদায় করেন। এ ধরণের অনেকজনের নাম আমি বলতে পারব।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় বরকলের ২৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুদান পায়। কিন্তু এ টাকার সিংহ ভাগ নেন আবদুস সালাম। স্কুল প্রতি আড়াই ও দুই লাখ বরাদ্ধ আসলেও খবর নিয়ে জানা গেছে বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকরা প্রকৃত অর্থে অনেক কম টাকা পেয়েছেন।  ফলে বিদ্যালয়ে সংস্কার কাজ যথাযত করা সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক এক প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি অফিসে কাগজে কলমে আড়াই লাখ টাকা গ্রহণ করেছি। কিন্তু এ টাকা পেয়ে সুদের টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। কারণ এ প্রকল্প আনার আগে আমাকে টাকা দিতে হয়েছিল। এ অংকের পরিমাণও বেশ বড় ছিল।

কুকিছড়া ২ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকক ধন বিকাশ চাকমা বলেন, আমার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৯ জন। ৩০ জনের নিচের বিদ্যালয়গুলো স্লিপের টাকা পায় না। ফলে বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য বরাদ্ধ পাবার সম্ভাবনা নেই। বিদ্যালয়টি বেড়া ও টিনের চাউনী। টিনে মরিচা পড়ে ছিদ্র হয়ে হয়েছে। পুরো বিদ্যালয়ে পানি পড়ে। এছাড়া বেড়াগুলো উই পোকা খেয়েছে। কাঠের দরজা জানালা ভেঙে পড়েছে। টয়লেট নষ্ট হয়ে গেছে। টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো সংস্কার করতে আমার ৫ লাখের বেশী টাকার প্রয়োজন। কিন্তু আমি বাস্তবে যা পেয়েছি তা একেবারে নগণ্য।
এ টাকা দিয়ে টয়লেট ঠিক করেছি। কিছু ঢেউটিন পরিবর্তন করেছি। দরজা লাগিয়েছি। জানালা লাগিয়েছি। আরো অনেক কাজ করতে পারিনি।

বিদ্যালয়টি পাকা ভবন না পাওয়া পর্যন্ত আমাকে প্রতি বছর সংস্কারের কাজ করতে হবে। বরাদ্ধ না পেলে বিদ্যালয়ে পাঠদানের পরিবেশ থাকবে না। বিদ্যালয়টি পাকা ভবন করার জন্য জরিপ করা হয়েছে। পাকা হয়ে গেলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব।

 

আইমাছড়া ইউনিয়নের নিকসেন্দ্রা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো হারুন অর রশীদ বলেন, আমার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২৬ জন। বসার জায়গা দিতে পারি না। বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা জরুরী। আমার বিদ্যালয়ের নামে আড়াই লাখ বরাদ্ধ আসলেও আমি প্রকৃত অর্থে পেয়েছি ৫ ভাগের এক ভাগ। এ টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের রংয়ের কাজ করেছি। বিদ্যালয় ভবনের গোড়া থেকে সরে যাওয়া মাটি ভরাট করেছি। হাফ ওয়াল টিনের ঘরটি মেরামত করেছি।

বরকল উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মিলিন্দ চাকমা বলেন, সম্প্রতি ২৬ টি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ নিয়ে মিডিয়ায় খবর প্রকাশের পর নানান প্রশ্ন জন্ম দেয়। এতে আমরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।

মিলিন্দ চাকমা আরো বলেন,  টিইও আব্দুল সালামকে বদলী করানোর পর আমরা শিক্ষক সমিতির সদস্যরা সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের সাথে দেখা করেছি। তাঁকে আমরা অনুরোধ করেছি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কোন শিক্ষা কর্মকর্তাকে যেন বরকল পোস্টিং দেয়া না হয়। কারণ অতীতে অধিকাংশ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা বরকলে পোস্টিং দেয়া হয়। সৎ কর্মকর্তা খুব কম পোস্টিং দেয়া হয় বরকলে।

ভারপ্রাপ্ত বরকল শিক্ষা অফিসার হিতৈষী চাকমা বলেন, আমি সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পেয়েছি। চেষ্টা করছি আমার দায়িত্ব যথাযত পালন করার।

রাঙামাটি সংসদীয় আসনের সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক কর্মকর্তাকে শাস্তিমুলক বদলী করার কারণে তারা পাহাড়ে এসে আরো অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন। এতে পাহাড়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি যেন করা না হয় সেজন্য আমি বার বার বলে যাচ্ছি শুধু বরকল নয়, তিন পার্বত্য জেলাকে যেন পানিসমেন্ট জোন হিসেবে চিহ্নিত না করে এখানে ভাল কাজের পুরস্কারের অংশ হিসেবে এখানে পদায়ন করা হয়।
আমি এ কথা শুধু সংসদের বলছি না। আমি জন প্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় কমিটির একজন সদস্য হিসেবেও নিয়মিক সভায় এ কথা বলে যাচ্ছি। পাহাড়ে ১ম থেকে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করতে বলেছি। এখানে সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আর পানিসমেন্ট জোন থাকবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের পর তাদের যেন আরো ভাল জায়গায় পদায়ন করা হয় সেটাও সুপারিশ করে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় বরকলের ২৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুদান পায়। এ প্রকল্পে বরকল প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এছাড়া শিক্ষকের কাছে ঘুষ দাবী। বিদ্যালয়ে বই না দেওয়ার অভিযোগ উঠে সালামের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের পর সালামকে সিলেটের সুনামগঞ্জে শাল্লায় বদলী করা হয়।

সর্বশেষ - আইন ও অপরাধ

%d bloggers like this: