খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেছেন, এক সময়ের দুর্গম পাহাড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-শিক্ষক অথবা সচেতন মানুষ তো দূরে থাক; যোগাযোগেরও কোন ভালো মাধ্যম ছিলো না। সেই অন্ধকার সময়ে একজন কৃষ্ণ কিশোর চাকমা’র হাত ধরে প্রাথমিক শিক্ষার গোড়াপত্থন ঘটে। তাই পাহাড়ে শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখা গুণীজনদের স্মরণ এবং তাঁদের প্রতি সম্মান জানানো আজ সময়ের দাবি।
তিনি বৃহস্পতিবার বিকেলে খাগড়াছড়ি শহরের অফিসার্স ক্লাব হলে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি-খাগড়াছড়ি জেলা শাখা আয়োজিত নব-নিযুক্ত তিন শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের জন্য আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি প্রাথমিক শিক্ষকদের গুরুত্ব ও অবস্থান বোঝাতে গিয়ে বলেন, একজন শিক্ষকের ভূমিকা তখনই স্বার্থক হবে, যখন কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শিক্ষাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। একজন শিক্ষক সমাজের সকল মানুষের কাছে মর্যাদা ও সম্মানের। শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিখন প্রক্রিয়া উন্নয়ন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ বিনির্মাণে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমৃদ্ধ জাতি গড়ে তুলতে শিক্ষকেরাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
“স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে নবীন শিক্ষকদের ভূমিকা” স্লোগানে জেলার নব নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বরণ ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মো: মাসুদ পারভেজ।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী,খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য ও পরিষদের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের আহবায়ক নিলোৎপল খীসা, পরিষদের সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, এড. আশুতোষ চাকমা ও ক্যজরী মারমা এবং খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাহাব উদ্দিন।
প্রতিমন্ত্রী পদ-মর্যাাদার শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি আরো বলেন, ‘১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-ই উপলদ্ধি করেছিলেন, এই দেশ-জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। তাই তিনি একসাথে সারা দেশের ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন। এরপর দীর্ঘ উনচল্লিশ বছর এই দেশে কতো সরকার এলো গেলো; আবার ২০১৩ সালেই বঙ্গবন্ধু কন্যাই সাহস করে একসাথে আরো ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’।
শেখ হাসিনা শিক্ষার প্রসার ঘটাতে নানামুখী উদ্যোগে বর্তমান শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে আছে। সে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারো সকলকে নৌকার বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি।
বক্তব্যকালে এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বঙ্গবন্ধু,বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাসহ বর্তমান সরকারের পথচলা ও উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার পথে স্বপ্নদৃষ্টা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর শেখ হাসিনার এদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করে আজকের উন্নয়নের বাংলা গড়ার কথা তুলে ধরে সরকারের আগামীর পরিকল্পনার কথা জানান।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক সুরেশ ত্রিপুরা স্বাগত বক্তব্যে জেলার ৩’শটি প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেন।
নৃত্যশিল্পী ও শিক্ষক ধীনা ত্রিপুরা’র সঞ্চালনায় সম্পন্ন সভায় অন্যান্যদের মধ্যে শিক্ষক অজিন্দ্র লাল ত্রিপুরা, নেতা স্বপন চৌধুরী, ধনা চন্দ্র সেন, ঝিনু চাকমা, কাজী সাইফুল ইসলাম, জাফর আহাম্মদ, আনোয়ার হোসেন এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষক রিটেন চাকমা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবেত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার পাশাপাশি নতুন শিক্ষকদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।


















