খাগড়াছড়িতে বেসরকারি উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রকল্প অবহিতকরণ কর্মশালায় বক্তারা বলেছেন, সমতলের চেয়ে তিন পার্বত্য জেলার জনগোষ্ঠি জীবনমানের দিক থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে। জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যহার ২৪.৩ শতাংশ হলেও পার্বত্যাঞ্চলে সেই হার ৪৮.১৩ শতাংশ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বান্দরবানে ৬৩.২ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৫২.৭ শতাংশ এবং রাঙামাটিতে ২৮.৫ শতাংশ। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এবং অতি দরিদ্র পরিবারগুলোর সহনশীল জীবিকার জন্য সরকারি- বেসরকারি সমন্বিত ভূমিকা প্রয়োজন।
মঙ্গলবার সকালে ‘ইউরোপিয়ান ইউনয়ন (ইইউ)-এর সহযোগিতায় এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)-এর নেতৃত্বে খাগড়াছড়িতে বাস্তবায়নাধীন ‘পার্টনারশিপ ফর রেজিলিয়েন্ট লাইভলিহুডস ইন সিইএইচটি রিজিয়ন (পিআরএলসি)’ প্রকল্পের অবহিতকরণ কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে যোগাযোগ এবং ভৌগলিকভাবে খাগড়াছড়ি অপর দুই পার্বত্য জেলার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। যেহেতু সরকারি পরিসংখ্যানে আমরা দারিদ্র্যতার হারে পিছিয়ে রয়েছি সেহেতু আমাদেরকে এই বিষয়ে সজাগ হতে হবে। এজন্য বেসরকারি
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চৌধুরী’র সভাপতি জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, এমজেএফ’র প্রধান নির্বাহী শাহীন আনাম।
তিনি বলেন, পাহাড়ের বিশ হাজার পরিবারকে অতি দারিদ্র্য অবস্থা থেকে উত্তরণের মাধ্যমে উন্নয়নে মূল ¯্রােতধারায় সংযুক্ত করায় এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এমজেএফ ছাড়াও অনেকগুলো দেশি-বিদেশী উন্নয়ন সহযোগী অনেকদিন ধরেই পাহাড়ে সক্রিয় রয়েছে। সবার উদ্যোগে পাহাড়ের প্রান্তিক মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত, জীবনমানের পরিবর্তনে এমজেএফ অঙ্গীকারাবদ্ধ।
এছাড়া সমাজে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।
পিআরএলসি’র প্রকল্প সমন্বয়কারী নিখিল চাকমা কর্মশালায় প্রকল্প সম্পর্কিত ভিজুয়াল বিশদ উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ’র নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাবের, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুমানা আক্তার, এমজেএফ’র কর্মসূচি সমন্বয়ক ও ডেলিগেশন অব ইইউ টু বাংলাদেশ মিজ. মেহের নিগার ভূইয়া এবং জেলা পরিষদ সদস্য শতরুপা চাকমা।
এমজেএফ’র পরিচালক (কর্মসূচি) বনশ্রী মিত্র নিয়োগী’র সঞ্চালনায় পরিচালিত কর্মশালা বিষয়ক মুক্ত আলোচনায় নিজস্ব মতামত উপস্থাপন করেন পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ফারুক আব্দুল্লাহ, পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলতাফ হোসেন, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অনুকা খীসা, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জহুরলাল চাকমা, দৈনিক অরণ্যবার্তা’র সম্পাদক চৌধুরী আতাউর রহমান, সিন্ধুকছড়ির ইউপি চেয়ারম্যান রেদাক মারমা এবং লক্ষ্মীছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রভিল চাকমা।
উল্লেখ্য পিআরএলসি প্রকল্পটি ২০২৩ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলার আটটি উপজেলার প্রায় একলক্ষ (বিশ হাজার অতিদরিদ্র পরিবার) জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবে। এতে স্থানীয় পর্যায়ে এনজিও আলো, তৃণমূল, হিল ফ্লাওয়ার, টঙ্যা, আশিকা, প্রগ্রেসিভ, বিএনকেএস, গ্রাউস এবং তজিংডং বাস্তবায়নকারী হিসেবে থাকবে।