শুক্রবার , ২৪ মে ২০২৪ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. জাতীয়
  2. রাঙামাটি
  3. খাগড়াছড়ি
  4. বান্দরবান
  5. পর্যটন
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. রাজনীতি
  8. অর্থনীতি
  9. এনজিও
  10. উন্নয়ন খবর
  11. আইন ও অপরাধ
  12. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
  13. চাকরির খবর-দরপত্র বিজ্ঞপ্তি
  14. অন্যান্য
  15. কৃষি ও প্রকৃতি
  16. প্রযুক্তি বিশ্ব
  17. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
  18. শিক্ষাঙ্গন
  19. লাইফ স্টাইল
  20. সাহিত্য
  21. খোলা জানালা

নাব্যসংকটে বন্ধ লঞ্চ চলাচল, ভোগান্তিতে ৬ উপজেলার মানুষ

প্রতিবেদক
জিয়াউর রহমান জুয়েল, রাঙামাটি
মে ২৪, ২০২৪ ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ

৭২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই হ্রদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মিষ্টি পানির কৃত্রিম জলাধার। ১৯৬০ সালে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের হাত ধরে তৈরি হয় বহুমুখী এই হ্রদ। এই হ্রদের ওপর নির্ভর করে চলছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, মৎস্য ভাণ্ডার, নৌ-যোগাযোগ, পর্যটন শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য।

তবে হ্রদ সৃষ্টির ৬৪ বছর পেরিয়ে গেলেও একবারও পলি অপসারণ করা হয়নি। দখল, দূষণ আর মানবসৃষ্ট বর্জ্যের সঙ্গে পলি জমে তলদেশ ভরাট হওয়ায় কমেছে গভীরতা। এর জেরে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে দেখা দেয় নাব্য সংকট। গেল ২৭ এপ্রিল থেকে নাব্য সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে লঞ্চ চলাচল। এতে রাঙামাটি জেলা শহরের সঙ্গে যুক্ত বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, বরকল, বিলাইছড়ি ও কাপ্তাই উপজেলার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে এমন সমস্যা হলেও কর্তৃপক্ষ পলি ড্রেজিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া ৯৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষার কথা জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।

প্রতি বছর খরা মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে হ্রদে অসংখ্য ডুবোচর ও গাছের গুড়ি জেগে ওঠে। এবার অবস্থা এতটাই নাজুক যে, হ্রদে চলাচলকারী ৫৩টি যাত্রীবাহী লঞ্চ ও ৩০০টি বড় ইঞ্জিনবোট চলাচল স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। এতে নৌযান মালিকদের দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে ১৫ লাখ টাকারও বেশি। আর এই খাতকেন্দ্রিক আয় বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার নৌযান শ্রমিক ।

বিকল্প উপায়ে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে যাত্রীদের কয়েক গুণ অর্থ গুনতে হচ্ছে। ইঞ্জিনচালিত ছোট দেশীয় নৌকায় চড়ে আর পায়ে হেঁটেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে দুর্গম উপজেলাবাসীকে।

নৌ-যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমে এসেছে সাময়িক স্থবিরতা। পণ্য পরিবহনেও বেড়েছে কয়েক গুণ খরচ। বাড়তি এই অর্থ তুলতে ভোক্তাদের কাছ থেকে পণ্যের দাম বাড়িয়ে নিতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। এতে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম।

লঞ্চযাত্রী লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের বাসিন্দা নূর হোসেন বলেন, ‘পানি কমে যাওয়ায় বোটগুলো আটকে যায়। ঠেলে ধাক্কা দিয়ে বোট নিয়ে যেতে হয়। যাতায়াতে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।’ স্থানীয় ঘনমোড়ের বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, ‘পানি কমে যাওয়ায় দুই ঘণ্টার পথ এখন পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা লাগছে। ছোট নৌকা কিংবা পায়ে হেঁটে ভেঙে ভেঙে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। এতে খরচ পড়ছে তিন-চারগুণ।’

নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দে বলেন, ‘এক বস্তা চালে আগে যেখানে ৩০ টাকা পরিবহন খরচ হতো, এখন সেটি ১০০ টাকা হয়ে গেছে। পাহাড়িরাও কাঁচামাল আনতে পারছে না। যাতায়াত করতে পারছে না। কাঁচামাল জায়গাতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে ওরা কাঁচামাল নিয়ে বাজারে না এলে আমাদেরও ব্যবসা হচ্ছে না।’

লঞ্চচালক আব্দুল মান্নান (৫০) বলেন, ‘কাঁদাবালি ঢুকে আমার লঞ্চের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমার সাড়ে তিন লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। লঞ্চ বন্ধ হওয়ায় এখন দৈনিক লোকসান হচ্ছে। মালিকপক্ষকেও দৈনিক লস দিতে হচ্ছে। নৌযান বন্ধ হওয়ায় এ খাতের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা এখন বেকার হয়ে অর্থকষ্টে ভুগছেন। প্রতি বছরই এ মৌসুমে এমন সমস্যায় পড়তে হয়। হ্রদ খনন না হলে এর সমাধান আসবে না।’

কাপ্তাই হ্রদ রক্ষা ও নৌ-যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত হ্রদ খননের দাবি রাঙামাটিবাসীর। লঞ্চ মালিক মো. আলমগীর বলেন, ‘লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। বেতন দিতে না পাড়ায় স্টাফদের রাখা যাচ্ছে না। তার ওপর পুঁজি ভেঙে করতে হচ্ছে লঞ্চ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।’

রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈনউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘হ্রদে চলাচলকারী ৫৩টি যাত্রীবাহী লঞ্চ ও ৩০০টি বড় ইঞ্জিনবোট চলাচল এখন বন্ধ রয়েছে। এতে নৌযান মালিকদের দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে ১৫ লাখ টাকার বেশি। এখন ছোট ছোট নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপার করছে। দীর্ঘদিন ধরে হ্রদ ড্রেজিংয়ের দাবি জানিয়েও কোনো কাজে হয়নি।’

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া ৯৭৭ কোটি টাকার একটি ডিপিপি এখন একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে দ্রুত হ্রদ ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। তখন পলি সমস্যার সমাধান হবে।’

সর্বশেষ - আইন ও অপরাধ

%d bloggers like this: