রাঙামাটি থেকে ফ্যাসিবাদের চিহ্ন শেখ মুজিবের মূর্তি অপসারণে জেলা পরিষদকে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়েছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতা। নইলে কঠোর কর্মসুচির মাধ্যমে আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন বিক্ষোভকারীরা। জুলাই বিপ্লবের দীর্ঘ ৯ মাসেও ওই মূর্তি অপসারণ না করে বর্তমান জেলা পরিষদ ছাত্র জনতার রক্তের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করছে বলেও অভিযোগ তুলেন তারা।
আজ (মঙ্গলবার, ১৩ মে) দুপুরে মূর্তি অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা পরিষদে অবস্থান নেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতা। এসময় জেলা পরিষদের মূল ফটক বন্ধ করে ঘন্টা ব্যাপী বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন বিক্ষোভকারীরা।
সমাবেশ থেকে শেখ মুজিবের মূর্তি অপসারণে জেলা পরিষদকে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম বেধে দেয়া হয়। নইলে আগামী শুক্রবার জুমাআর নামাজের পর ছাত্র জনতা নিজেরাই মুজিবের মূর্তি ভাঙবেন বলে হুশিয়ারী দেন। একইসাথে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনার জন্য জেলা পরিষদকে এর দায় নিতে হবে বলেও জানান বক্তারা।
সমাবেশে ছাত্র জনতা নেতৃবৃন্দ বলেন, সারা দেশে শেখ মজিবুরের ভাষ্কর্য ও সকল ফ্যাসিবাদ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হলেও রাঙামাটি সিও অফিস সংলগ্ন শেখ মজিবুরের ভাষ্কর্যটি এখনও ভেঙে ফেলা হয়নি। আন্দোলন পেরিয়ে প্রায় ৭-৮মাস হয়ে গেলও যথা স্থানে শেখ মজিবুরের ভাস্কর্ষ রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের কবর রচনা হয়ে গেছে এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তার পরও কি করে শেখ মজিবুরের ভাস্কর্ষ রয়ে গেছে।
এসময় ছাত্র-জনতার নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, শেখ মজিবুরের ভাষ্কর্যের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা শেখ মজিবুরের ভাস্কর্ষ নির্মাণ কালে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাই আমরা বলবো এই ভাষ্কর্যের সাথে যারা সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগের লেডিস এমপি চিনুকেও আসামী হিসেবে গ্রেফতার করতে হাবে। তাই আমরা আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এই মুর্তি ভেঙে ফেলতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা পরিষদ (সাবেক) নির্বাহী প্রকৌশলী ও ফ্যাসিস্ট এর দালাল বিরল বড়ুয়া ও বর্তমানে জেলা পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী এরশাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তাই এই দুইজনকেই আইনের আওতায় আনতে হবে। বিরল বাবু ও এরশাদ হোসেন ২জনই ফ্যাসিস্ট ও পতিত সরকারের সক্রিয় দালাল ছিল। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই ভাস্কর্ষ ভাংগতে জেলা পরিষদের গাফেলতি রয়েছে।
এই কর্মসুচিকে ঘিরে শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নেয়া হয় বাড়তি নজরদারি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
এর আগে বেলা সাড়ে এগারোটায় শহরের বনরূপা মসজিদেের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে প্রধান সড়ক হয়ে জেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। সমাবেশ শেষে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদারের সাথে বৈঠক করে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম বেধে দেন আন্দোলনকারীরা। এসময় চেয়ারম্যান এ দাবির বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্হা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলে কর্মসুচি সমাপ্ত ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা।
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন রাঙামাটি জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শাফি। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ওয়াহিদুজ্জামান রোমান, মো রাকিব উদ্দীন, ইমাম হোসেন ইমু, মো: আব্দুল্লাহ, সায়েদা খাতুন, সর্বজিত চাকমা প্রমূখ।