রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড এর পাগলী উপর পাড়ায় ফকির মুরং ঝর্নার (স্থানীয় তনচংগ্যা ভাষায় ফইরা মুরং) সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমন পিপাসুদের দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এই ঝর্ণাটি প্রাণ ফিরে পাই। সেই দূর পাহাড় হতে নেমে আসা অবিরাম জলধারা ঝর্ণার গাঁ ঘেঁষে প্রায় ১ শত ফুট উপর হতে আচড়ে পড়ে। আধা কি: মি: দূর হতে সেই ঝর্ণার রিনিঝিনি শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। মনে হয় কোন স্বর্গের অপ্সরী তাঁর সুমুধুর কন্ঠে নৃত্যের ছন্দে গান গেয়ে যাচ্ছেন।
এর আশেপাশে ছোট বড় কয়েকটি ঝর্না, সেই ঝর্না হতে অবিরাম ধারায় পানির প্রবাহমান ধারা, পাখির কিচির মিচির শব্দ এবং পাহাড়, বন বেষ্টিত এই ফইরা মুরং ঝর্না যেন প্রকৃতি দেবীর এক অপূর্ব সৃষ্টি, তাই প্রতিদিন ভীড় লেগে আছে প্রকৃতিপ্রেমীদের।
গত শুক্রবার (২০ জুন) এই ঝর্ণার সৌন্দর্য অবলোকন করতে যান চাকমা সার্কেলের রাজা ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়। এসময় তিনি ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন।
এসময় ঝর্ণা দেখতে যাওয়া ১০০ নং ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান অরুণ তালুকদার এবং সামাজিক ব্যক্তিত্ব লাকি তনচংগ্যা বলেন, ফইরা মুরং ঝর্ণা বর্ষাকাল আসলে তাঁর অপরুপ সৌন্দর্য তুলে ধরে। আজকে রাজা বাবু সহ আমরা এই ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখে আবারও মুগ্ধ হয়েছি।
ঝর্ণা দেখতে আসা ঋতিক, শোভন, অজিত বলেন, কাপ্তাইয়ের এই ঝর্না আমরা আগে কখনো আসি নাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে আজকে দেখতে আসলাম। সত্যি এর রূপ মনোহারিণী। প্রচুর পানি আছে এই ঝর্ণায়।
এলাকার বাসিন্দা সংগীত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার শিক্ষক সূর্য্যসেন তনচংগ্যা জানান, আমরা দাদুদের মুখ থেকে শুনেছি, শত বছর আগে এই পাহাড়ে এক সাধক বা ফকির ধ্যান করতো, লোকজন পুজা দিতো, মানত করতো, ফকির ধ্যান করতো বলে স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে ফুকির মুরং বা ফকির কুয়া বা ফইরা মুরং ঝর্না।
এলাকার ৫ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য তপন তনচংগ্যা জানান, এই ঝর্না দেখতে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে। তবে আমরা মাঝে মাঝে দেখতে পাই অনেক পর্যটক নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহন করে এবং আশেপাশে মানুষের ফলমূল নষ্ট করে। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ হতে এসব কাজ হতে বিরত থাকতে পর্যটকদের অনুরোধ জানাই।
স্থানীয় যুবক কাপ্তাই ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াগগা ভলান্টিয়ার এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও উক্ত সংগঠনের কার্যকরী কমিটির দপ্তর সম্পাদক বীর কুমার তনচংগ্যা বলেন, ফইরা মুরং আমাদের কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগগা ইউনিয়নের আশীর্বাদ স্বরুপ, কেননা ঝর্ণায় বর্ষার মৌসুমে প্রচুর পর্যটক আগমন ঘটে। ফলে ঝর্ণার মাধ্যমে ওয়াগ্গা পরিচিতি বাড়ছে। আনন্দের মাঝে অস্বস্তিকর ও দু:খের বিষয় যে পর্যটকদের দ্বারা ব্যবহৃত বিভিন্ন পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক বর্জ্য ঝর্ণার আশে পাশে ছড়ার পানিতে ফেলে ঝর্ণার পরিবেশ জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে। তাই সবার কাছে অনুরোধ, যেখানে সেখানে না ফেলে বর্জ্য গুলো সংগ্রহ করে ঝর্ণার বাইরে নিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে আমাদের পরিবেশ কে বাঁচাতে সহযোগিতা করুন।
কাপ্তাই উপজেলার বড়ইছড়ি- ঘাগড়া সড়কের বটতলি এলাকার পূর্ব পাশ ধরে ৩ কিমি পাহাড়ী পথ আর ছড়া পাড় হয়ে এই স্থানে পৌঁছানো যায়। আশেপাশে শত শত তনচংগ্যা পরিবারের বসবাস। পথে মধ্যে পাগলি মুখ পাড়া, পাগলি মধ্যম পাড়া গ্রাম পার হয়ে পাগলি উপর পাড়া এই ঝর্নার দেখা মিলবে। এই স্থানে যেতে যেতে আরোও পর্যটকরা উপভোগ করতে পারবেন পাহাড় হতে বয়ে চলা ছড়ার পানির বহমান ধারা, আশেপাশে অনেকগুলো পাহাড়ী গাছ গাছালি এবং ছোট ছোট ঘর।