বৃহস্পতিবার , ২ অক্টোবর ২০২৫ | ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. জাতীয়
  2. রাঙামাটি
  3. খাগড়াছড়ি
  4. বান্দরবান
  5. পর্যটন
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. রাজনীতি
  8. অর্থনীতি
  9. এনজিও
  10. উন্নয়ন খবর
  11. আইন ও অপরাধ
  12. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
  13. চাকরির খবর-দরপত্র বিজ্ঞপ্তি
  14. অন্যান্য
  15. কৃষি ও প্রকৃতি
  16. প্রযুক্তি বিশ্ব
  17. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
  18. শিক্ষাঙ্গন
  19. লাইফ স্টাইল
  20. সাহিত্য
  21. খোলা জানালা

খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন

প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম।
অক্টোবর ২, ২০২৫ ৪:১১ অপরাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সময়ে সশস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইউপিডিএফ তাদের পুরনো নীলনকশা অনুযায়ী আবারও পাহাড়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্ত করার জন্য নেমেছে ভয়ঙ্কর অপতৎপরতায়। ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগকে কেন্দ্র করে তারা অবরোধের নামে সাধারণ নিরীহ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর উপর প্রকাশ্যে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। শুধু হামলাই নয়, তারা মসজিদে অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট লুটপাট এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়ার মতো জঘন্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পাহাড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি পাহাড়ের সাধারণ মানুষকে গভীর উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। প্রকৃত সত্য আড়াল করে একটি মিথ্যা নাটক সাজিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং পাহাড়ের সামাজিক সম্প্রীতিকে ধ্বংস করার এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ ও যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল ০২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছে।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের (পিসিএনপি) চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট পারভেজ তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন কায়েস, সাধারণ সম্পাদক হাবীব আজম, পিসিসিপি বান্দরবান জেলা সভাপতি হাবীব আল মাহমুদ, যুব পরিষদের সভাপতি এডভোকেট নূর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আফসার রনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি এবং মহানগর কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথি কাজী মজিবর রহমান তার বক্তৃতায় বলেন, পাহাড়ে আজ এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্র চলছে। ভারতের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা “র” সরাসরি এই ষড়যন্ত্রে জড়িত এবং তাদের নির্দেশেই ইউপিডিএফসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে অশান্তি ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, বিদেশী শক্তির এই মদদে পরিচালিত সন্ত্রাসীরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, রাষ্ট্রের দৃঢ় পদক্ষেপ ও জনগণের ঐক্যের কাছে তারা কোনোদিন সফল হতে পারবে না। তিনি অবিলম্বে পাহাড়ে প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বলেন, পাহাড়ের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি।

বক্তারা অভিযোগ করেন, পাহাড়ে বারবার মিথ্যা নাটকের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল একটি বিষয়কে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মহলে ভিন্ন বার্তা ছড়ানো হচ্ছে। অথচ মেডিকেল রিপোর্ট এবং ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে যে অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তারা বলেন, এসব মিথ্যা নাটক সাজিয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছে ইউপিডিএফ ও তাদের মদদপুষ্ট চক্র। কিন্তু পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষ আর এসব ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না।

ছাত্র পরিষদ ও যুব পরিষদের নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেন, ইউপিডিএফসহ সব সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। এরা শুধু সন্ত্রাস ও রক্তপাতের মাধ্যমে জনগণকে আতঙ্কিত করছে, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিব্রত করার অপচেষ্টা করছে। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে পাহাড়ের জনগণকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

ছাত্র পরিষদের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন কায়েস বলেন, পাহাড়ের প্রকৃত সমস্যা উন্নয়ন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও মৌলিক অধিকার। অথচ সন্ত্রাসীরা এসব দাবি থেকে জনগণকে সরিয়ে নিতে বিভ্রান্তিকর আন্দোলনের ফাঁদ তৈরি করছে। তিনি বলেন, সময় এসেছে পাহাড়ের সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে এই ভুয়া আন্দোলনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। অধিকার বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য দাবির সংগ্রামে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

যুব পরিষদের সভাপতি এডভোকেট নূর হোসেন বলেন, রাষ্ট্রের ভিতরে আরেকটি রাষ্ট্র তৈরি করার নীলনকশা কোনোদিন সফল হতে দেওয়া হবে না। পাহাড় বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এখানকার জনগণ বাংলাদেশেরই নাগরিক। তিনি বলেন, পাহাড়ি-বাঙালি বিভাজন তৈরি করে ইউপিডিএফ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দিতে চাইছে। সম্প্রতি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনা তারই প্রমাণ। এটি শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ানোর একটি জঘন্য প্রচেষ্টা।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বক্তারা সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো: ১) অবিলম্বে ইউপিডিএফসহ সকল বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন নিষিদ্ধ করতে হবে। ২) প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্প পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে পাহাড়ে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৩) সাধারণ মানুষের উপর হামলা, লুটপাট, মসজিদে অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণের মিথ্যা নাটক সাজানোদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ৪) পাহাড়ে বসবাসরত সকল মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ৫) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

বক্তারা বলেন, সরকারের দায়িত্ব হলো জনগণের জানমাল রক্ষা করা। রাষ্ট্র যদি এখন কঠোর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয় তবে পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষ আর নিরাপদ থাকবে না। তারা বলেন, জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই পাহাড় থেকে সন্ত্রাস উচ্ছেদ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ। ছাত্র পরিষদ ও যুব পরিষদ ঘোষণা দেয়, তারা সব সময় জনগণের পাশে থাকবে এবং জাতীয় স্বার্থে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।

এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ পাহাড়ের মানুষের এক সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে তারা আর সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকতে চায় না। পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর নিষিদ্ধকরণ এখন আর বিলম্ব করার মতো বিষয় নয়। জনগণ সরকারের কাছে প্রত্যাশা করছে, অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং পাহাড়ের মানুষ তাদের সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাবে।

সর্বশেষ - আইন ও অপরাধ

আপনার জন্য নির্বাচিত
error: Content is protected !!
%d bloggers like this: