বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবো ফেনি কতৃক পরিচালিত (ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট) ও পানি ব্যবস্থাপনা দল ৬৬/৩ পোল্ডারের কেআর ৮ (এস-ত্রি) মনোমিয়া বাজার ও কেআর -২ কেআর ৬ (এসআই) পূর্ব খাঁনঘোনা পানি ব্যবস্থাপনা দলের ২ টি আহবায়ক কমিটি গঠন ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে গঠিত পুর্বখাঁনঘোনা ও মনোমিয়া বাজার পানি ব্যবস্থাপনা দলের কমিটির বিরুদ্ধে গ্রামের বাসিন্দা হাকিম আলী, মোঃ ফরহাদ, দেলোয়ার হোসেনসহ একই গ্রামের ৬ জন প্রকৃত উপকারভোগীর যৌথ স্বাক্ষরিত অভিযোগ ফেনি, কক্সবাজার পাউবো ও ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে দায়ের করেছেন। একই সাথে অভিযোগকারীরা অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি বিলুপ্তির আবেদনও করেছেন। কমিটির ধারাবাহিক বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসলামপুর মনোমিয়ার বাজার স্লুইসগেইটে মানববন্ধন করা হয়েছে। এতে স্লুইসগেট সংলগ্ন এলাকার প্রায় শতাধিক লোক অংশগ্রহণ করেছেন।
অভিযোগ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে পাউবোর অধীনে স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে ২ টি পানি ব্যবস্থাপনা দল গঠনে ৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়। এতে পূর্ব খাঁনঘোনা পিআইসির আহবায়ক হলেন মাষ্টার আবদুল কাদের এবং মনোমিয়া বাজার পিআইসির আহবায়ক হন তারই পুত্র আওয়ামী দোসর তৌফিকুল ইসলাম। তাকে আহবায়ক কমিটির কোন মিটিং এ পর্যন্ত দেখা মেলেনি।
এসবের বিপরীতে পাউবো থেকে নির্দেশনাও দেয়া হয়। এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাপ-পুত মিলো মনের মত লোককে সদস্য করে নির্বাচনের নামে পাঁয়তারা শুরু করে। বিষয়টি জানাজানি হলে ফুঁসে উঠে ঐ এলাকার সাধারন সুফলভোগী। একদল ভুক্তভোগী বিষয়টি সুরাহা চেয়ে পাউবো ফেনি উপ প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগ উঠেছে এসব অপকর্মে সরাসরি জড়িত ঐ এলাকায় ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের নিয়োজিত মাঠকর্মী রিয়াজুল ইসলাম। রিয়াজুল সাধারন সদস্যদের ভর্তি করার নামে শুরু করেছে বাণিজ্য। তিনি উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের মৌলভী আশরাফ আলী, ছৈয়দুল আমিন, নুরুল ইসলাম, ছৈয়দ নুর মেম্বার পুত্র আওয়ামী ফ্যাসিস্ট জয়নালকে আহবায়ক কমিটিতে পদ বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এমনকি ঐ এলাকায় পাউবো বেড়িবাঁধ সংলগ্ন লবণের গর্ত করায় স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহজান- সাহেদ থেকেও টাকা দাবী করেন। সম্প্রতি সময়ে ইসলামপুর বাজারে মাষ্টার কাদেরের ভাড়াবাসায় থাকার সুবাধে বাপ-পুতের সাথে গড়ে উঠেছে তার সখ্যতা। এমনকি রিয়াজুলকে বশে আনতে দেয়া হয়েছে ফ্রি বাসাও ব্যবহারের ফ্রিজ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রিয়াজুল-কাদের মাষ্টার -তৌফিক সিন্ডিকেটে নির্বাচনি এলাকায় জমি বা ঘর নেই এমন লোকজনদেরকে সদস্য করেছেন ভিন্ন উদ্দেশ্য। এমনকি এলাকার প্রকৃত কৃষকদেরকে বাদ দিয়ে সহোদর ভাইসহ ওই দল গুলোতে একই পরিবারের একাধিক সদস্য রাখা হয়েছে এবং তারা দায়সারাভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। আর পাউবো’র পানি ব্যবস্থাপনা দলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়েই ওইসব বাপ-পুত মার্কা পিআইসি কমিটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও এলাকায় চাউর হয়েছে।
সুত্রে জানা গেছে, পানি ব্যবস্থাপনা দলের উপ আইন ৩০ এর ৩ এর ১ ধারা মতে গঠিত আহবায়ক কমিটি নির্ধারিত ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে কমিটি বিলুপ্ত হবে। তদস্থলে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা যাবে, তবে পুর্বেকার কোন সদস্য কমিটিতে নেয়া যাবে না। এসব বিতর্কিত কমিটি বাদ না দিয়ে ফের নির্বাচনের চেষ্টা চালায় বাপ-পুত সিন্ডিকেট। অভিযোগকারীরা পাউবো’র উপবিধি মতে বহির্ভূতভাবে কমিটি বিলুপ্ত করে পুনরায় আহবায়ক কমিটি গঠনেরও দাবী জানান।
এবিষয়ে জানতে চাইলে পুর্বখাঁনঘোনা পিআইসি কমিটির সভাপতি মাষ্টার আবদুল কাদের কমিটিতে পরিবারের লোকজনকে সদস্য করার কথা স্বীকার করে বলেন, আপনার সব প্রশ্নের উত্তর আপনার সাথে সাক্ষাতে না বললে আপনি বুঝবেন না বলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।
মাঠকর্মী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা। যারা সদস্য হতে আবেদন করেছেন,তাদের মধ্য থেকে ৪২ জনকে সদস্য করা হয়েছে। বাকিরা নির্বাচনি এলাকার সাথে মিল না থাকায় বাদ পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনি উচ্চমান সহকারী এ এস এম মাছুদুল হক বলেন, সব অভিযোগ নজরে এসেছে, তবে এসব অভিযোগ দেখে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবো ফেনি উপ প্রধান হুমায়ুন ইসলাম বলেন, টাকার বিনিময়ে পিআইসি কমিটি আসুমোদন দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমার জানা মতে পাউবো’র নীতিমালা মেনেই সব ক’টি কমিটিরই আনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং যথাযথ ভাবেই কাজ চলছে।