রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে জেলা পরিষদ ঘেরাও করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এসময় তারা জেলা পরিষদের মূল ফটক ও ভবনের গেইটে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আজ (বুধবার, ১২ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার্থী’ ব্যানারে জেলা পরিষদ কার্যালয় ঘেরাও করে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। সকাল থেকেই জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। হাতে নানা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে তারা স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে যথাসময়ে পরিক্ষা অনুষ্ঠিতর দাবিতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি প্রদান করতে চাইলে তিনি এসময় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না। পরে মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি। পরে বিক্ষুব্ধ চাকরি প্রত্যাশিরা গেটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আন্দলোন করতে থাকেন।
মূলত আগামী ১৪ নভেম্বর (শুক্রবার) সকাল ১০টায় এ নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার বিকালে অনিবার্য কারণ উল্লেখ করে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তৃতীয় দফায় এই নিয়োগ আবারও স্থাগিত করা হয়। এবার ৫৮৯টি শূন্যপদে আবেদন করেছিলেন ৬ হাজার ৬৪৮ জন প্রার্থী। এর আগে এই নিয়োগ কার্যক্রমে নির্ধারিত লিখিত পরীক্ষা ২০২২ সালের ২৯ মে এবং ২০২৪ সালের ২০ মে— দু’দফায় স্থগিত করা হয়। এবারও একইভাবে ‘অনিবার্য কারণ’ দেখিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এতে চাকারি প্রত্যাশিরা বারবার পরীক্ষা স্থগিতের কারণে আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত পড়ছেন বলে জানান। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন একটি নিয়োগ কিভাবে ৩ বার স্থগিত করা হয়। নির্বাচনকে অজুহাত দেখিয়ে পরীক্ষা বন্ধ করা আসলে অন্যায্য সিদ্ধান্ত। অবিলম্বে লিখিত পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণার দাবি জানান তারা। একইসাথে তারা অবৈধ, অনিয়ম পরিহার করে মেধা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার দাবি জানান।
লংগদু উপজেলা থেকে আগত আনিকা দেওয়ান বলেন- বারবার নিয়োগ স্থগিত হওয়ায় তাদের চাকরির বয়স পার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর আগেও ২ দফায় নিয়োগ স্থগিত হওয়ায় অনেকের নির্ধারিত বয়স চলে গিয়েছে। তাই তারা এডমিট কার্ড পায়নি। এখন নতুন করে আবার নিয়োগ স্থাগিত হওয়ায় তারা শঙ্কায় রয়েছে।
নানিয়ারচর উপজেলার কবিতা চাকমা বলেন, আগামী ১৪ নভেম্বর আমাদের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলো তা হুট করেই বন্ধ করে দেওয়া কখনোই প্রত্যাশিত না। আমরা চাই অর্ন্তভর্তিকালীন সরকারের আমলেই এই নিয়োগ পরিক্ষার কার্যক্রম সম্পূর্ণ হউক। কারণ বিগত সময়ে আমরা দেখেছি যে সরকার ক্ষমতায় আসেছে তারাই দলীয়করণ করে চাকরি দিয়েছে। তাই নির্বাচনের আগেই এই নিয়োগ সম্পূর্ণ করা হউক।
লংগদু উপজেলার আরেক চাকরি প্রত্যাশিত জিনেল চাকমা বলেন- চাকরি পাওয়া ও চাকরি লাভের যে অধিকার তা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু এই জেলা পরিষদ বারংবার আমাদেরকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। আমারা তাই তিন দফা দাবি নিয়ে আজকে এখানে অবস্থান করছি। ১৪ নভেম্বর যথারীতি নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত, নিয়োগ পরিক্ষার স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহার করে পুনরায় নোটিশ প্রদান এবং অবৈধ, অনিয়ম পরিহার করে মেধা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করাই হচ্ছে আমাদের দাবি। অতিদ্রুত এই দাবি মানা না হলে আমরা সবাইকে একসাথে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
এদিকে পরিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনে মুখে দীর্ঘ ৪ ঘন্টা পর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে আন্দোলনকারীদের সাথে দেখা করতে আসেন জেলা পরিষদের সদস্য দেবপ্রসাদ দেওয়ান ও মিনহাজ মুরশিদ। পরে তারা আন্দোলনকারিদের সাথে কথা বলে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। এসময় চাকরি প্রত্যাশিত আন্দোলকারীরা জানান নির্দিষ্ট ঘোষণা না পাওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।


















