চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা এবং রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা-হত্যাকান্ড, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পুনরায় খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সংঘটিত একই ধরনের হামলা-লুটপাট-অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকান্ড অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয় শাসক গোষ্ঠির ক্ষমতার অপ-ব্যবহার, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, দলীয়করণ, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে অনীহা, অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি, ভূমি বেদখল, মিথ্যা মামলা ও দমন পীড়নের ফলে পাহাড়ি জনগণ বিক্ষুব্ধ এবং শঙ্কিত।
আজ রোববার দুপুরে খাগড়াছড়ি শহরে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি- দীর্ঘসূত্রিতার ২৮ বছর’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এইসব অভিযোগ তুলে ধরেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-এম এন লারমা)’ অংশের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা লিখিত বক্তব্যে এই অবস্থা উত্তরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের রোডম্যাপসহ সাতদফা দাবিনামা উত্থাপন করেন।
আটদফা দাবিনামার মধ্যে ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়নপূর্বক বিচারিক কাজ শুরু, ১৯০০ সালের শাসনবিধি চালু রাখা, ১৯৯৮ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে ক্ষমতায়িত করা, স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নপূর্বক তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন, প্রত্যাগত জেএসএস সদস্যদের যথাযথ পুনর্বাসন, ভার প্রত্যাগত শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের যথাযথ পুনর্বাসন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমতলের আদিবাসীদের জাতিস্বত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান অন্যতম।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ পাহাড়ি জনগণ এখন একটা নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকার অভিযোগ তুলে বলেন, বিগত সরকার (আওয়ামীলীগ) চুক্তি’র ১নং শর্ত-ই লঙ্ঘন করে এসেছে। চুক্তি’র মৌলিক বিষয়গুলো এড়িয়ে ৭২টি ধারার মধ্যে ৩৮টি ধারার কোনটি সম্পূর্ণ, কোনটি আংশিক এবং কোনটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রেখেছে। ৩৪টি ধারা একেবারে সম্পূর্ণ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রেখে দেয়া হয়েছে। বলা চলে আওয়ামীলীগ সরকার পাহাড়ি জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। পাহাড়ি জনগণ প্রতারিত হয়েছে।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা জানান, চুক্তি উত্তর সময়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে চার’শয়ের বেশি সহকর্মীর প্রাণহাণির তথ্য দিয়ে বলেন, আমরা এই সংঘাত পরিহারের পক্ষে। কোনভাবে সংঘাতে জড়িয়ে জনগণের ক্ষতি সাধন করতে অনিচ্ছুক।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, জেএসএস নিরাচনে বিশ্বাসী। তফশিল ঘোষণা হোক। স্থির সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনো হয়নি। তবে জনগণকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ দুই ধরনের ভূমিকার পথ খোঁজা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি বিশেষ অঞ্চল। এটি বিশেষ আইন দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে। তাই এখানকার নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্থানীয় কোটা সংরক্ষণ নিয়মসিদ্ধ। কিন্তু কয়েকটি পক্ষ অহেতুক নানা ইস্যুতে স্থানীয় ‘পাহাড়ি-বাঙালি’-দের মধ্যে বিভাজনের অদৃশ্য দেয়াল সৃষ্টি করছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুভাষ কান্তি চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি শোভাবর্ধন চাকমা ও সা: সম্পাদক প্রীতি খীসা, রাঙামাটি জেলা শাখার সা: সম্পাদক জুপিটার চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সুনীল চাকমা, মহিলা সমিতির নেতা রত্না তঞ্চংগ্যা, যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি জ্ঞান প্রিয় চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুজন চাকমা ঝিমিট, হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মায়া চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।


















