রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবিদ্যালয় (রাবিপ্রবি)-এর প্রথম ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক এবং ইউজিসি’র দায়িত্বরত সদস্য ড.প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা বুধবার সকাল ৮.২০ মিনিটে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভারসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে একমাত্র সন্তান কানাডা প্রবাসী অনিক চাকমাসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি হিসেবে যোগদান করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, একমাত্র ছেলে কানাডা থেকে আসার পর শুক্রবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে পারিবারিক শ্মশানে প্রয়াতের দাহক্রিয়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।এর আগে বৃহস্পতিবার তার মরদেহ রাঙামাটিতে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হবে। সকাল ৮ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত তাকে সেখানে শ্রদ্ধা জানানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়।
অদম্য মেধাবী এ ব্যক্তি খাগড়াছড়ির খবংপুড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা, ১৯৬৯ সনে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৭১ চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে (কুমিল্লা বোর্ড) এর অধীনে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১৩তম হয়ে এইচএসসি এর্বং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন।
পরবর্তীতে ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০২১ সালের শেষের দিকে তিনি অবসরে গ্রহন করেন। এরপর থেকে তার নিজ বাড়ি খাগড়াছড়িস্থ খবংপুড়িয়ায় বসবাস করছিলেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তিত্ব যিনি পার্বত্য তিন জেলা থেকে দেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি’র দায়িত্ব পালন করেছেন।
ড. প্রদানেন্দু চাকমা’র মৃত্যুতে খাগড়াছড়ি জেলার পাশাপাশি রাঙামাটিতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে খাগড়াছড়ির খবংপড়িয়ায় প্রয়াতের বাড়িতে ছুটে যান খাগড়াছড়ি সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী, সা: সম্পাদক সৈকত দেওয়ানসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এসময় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া ফুলেল শ্রদ্ধায় মরদেহের চারপাশ ভরে উঠে।
খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্র পদ-মর্যাদায় শরণার্থী টাস্কফোর্স’র চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাহাড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য যখন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বোনেন তখন থেকেই ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমাকেই প্রথম ভিসি হিসেবে দেখার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন। পরে মহামান্য রাষ্ট্রপতিও এই প্রথিতযশ শিক্ষাজনকেই বেছে নিয়েছেন। তাঁর মতো বিশাল উচ্চতার মানুষ পাহাড়ে আর সৃষ্টি হবে কীনা শংসয় থেকেই যায়।
প্রদানেন্দুর মৃত্যুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙামাটি জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রবর্তক চাকমা, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি কাঞ্চন চাকমা শোক জানিয়েছেন।