বান্দরবান রুমা উপজেলা জুম চাষিদের জুমে ইঁদুর আক্রমনে জুমিয়ারা এখন দিশেহারা। এখন দশ হাজারের অধিক জুমিয়ার খাদ্য সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পাহাড়ে জুমে ধান, ভুট্টা, তিল, মিষ্টি কুমড়া, মারফা, আদা – হলুদ সহ হরেক রকমের ফসল চাষ করে থাকেন জুমিয়ারা। চলতি বছরে অনাবৃষ্টির কারণে জুমে ভাল ফসল হয় নাই এমন অভিযোগ করেছে পাহাড়ের জুমিয়ারা। আরও অভিযোগ করে বললেন, এখন জুমে ধান কাটার সময় হয়েছে, কিন্তু ধান কাটার জন্য জুমে ধানের শীষ পাওয়া যায় না। ধান গুলো ইঁদুর খেয়ে সব শেষ করেছে।
রুমায় ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের মুননুয়াম পাড়ার জুমিয়াদের জুমে গিয়ে দেখা যায়, জুমে ধান, তিল, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের উপর ইদুরে আক্রমনের চিত্র দেখা যায়। পাড়ার চা দোকানে অধিকাংশ জুমিয়ারা চায়ে আদ্দা আসর বসে আছে। দোকানে বসে থাকা পাড়ার কারবারি ( পাড়ার প্রধান) রোয়াল লেই জানান, আমাদের মুননুয়াম পাড়ার ১শত বিশ পরিবার বসবাস, আমরা সবাই জুমের উপর নির্ভরশীল। এখন জুমের অবস্থা অনেক খারাপ। ইদুরের আক্রমনে ধানকাটার মত জুমে ধান আর নাই। অনেকে জুমে গিয়ে ইদুর আক্রান্ত জুমের চিত্র দেখে চোখের পানি জ্বরে পরে, আর অনেকে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে কান্না ভেঙ্গে পরেন। এখন কাজ-কর্ম নাই, সবাই বেকার অবস্থা। সামনে দিন গুলো আমাদের অনেক কঠিন হবে। কি হবে জানি না।
ভোক্তভোগী জুমিয়া মুননুয়াম পাড়ার এলিজাবেথ বম, ভানচহন বম, পারময় বম, বিয়াকদিক বম তারা জানান, জুমে ধানের শীষের আস্ত আর নাই। আর কি ধান কাটবো? সামনে বছরে কি খাবো জানিনা। ইদুর নিধনের জন্য জুমে অনেক ফাঁদ, বিষ সহ বিভিন্ন কায়দায় ব্যাবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু ইদুর শেষ হচ্ছে না। ইদুর যেন দিন দিন বাড়ছে। বাজারে জিনিসের যেভাবে দাম বারে, খাবারের অভাবে আমাদের মরতে হবে।
মাদংগ তংচংঙ্গা জানান, আমি আট হাড়ি ধান লগিয়ছি। ইদুর খেয়ে সব শেষ। আমরা আছি আট জন সদস্য। আমার সংসার কি হবে জানিনা। এই পাহাড়ে দিন মজুর করবো সেটাও নাই।
অভিলালা তংচংঙ্গা জানান, আমি ছয় হাড়ি ধান লগিয়েছি, জুমে ধান সব শেষ। এমন অবস্থায় সরকার যদি সহযোগিতা না করে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে, বাচার উপায় থাকবে না।
রুমা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারনের কর্মকর্তা মোঃ সাবাব ফারহান জানান, জেলা অফিস অনাবৃষ্টি আক্রান্তের জন্য প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে, সেই প্রেক্ষিতে আমরা জেলা অফিসে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি পরিমান রুমা উপজেলায় পাহাড়ি জুমের আবাদি জমি ২২৩৪ হেক্টর জমি এর মধ্যে অনাবৃষ্টি আক্রান্ত ৯২৪ হেক্টর জমি। সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির ২১ হেক্টর জমি, বাকি জমি গুলো আংশিক আক্রান্ত। ২১ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে ১৫ হেক্টর জমি ইদুরের আক্রমন বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরও বললেন, ইদুর নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা। ধান যদি মোটামুটি পেকে যায় কাটার পরামর্শ দিয়ে আসছি। ক্ষয়ক্ষতির জুমিয়ারা দিশেহারায় দিন কাটছে। তাদের পাশে সরকারি বেসরকারী সেবা প্রদানকারী সংস্থার সাহায্যের কামনা করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রুমা উপজেলা পাহাড়ের জুমক্ষেতে ভয়াবহ ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে ! এতে রুমা উপজেলায় দশ হাজারেও বেশি জুমচাষী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় ও জুমিয়ারা দাবি হাজার হাজার একর জুমের ধান খেয়ে জুম নষ্ট করে দিয়েছে ইঁদুর। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ের বৃহৎ জনগোষ্ঠী জুমচাষের উপর নির্ভরশীল ফলে ধানের বাম্পার ফলন না হাওয়া সহ ইদুরের আক্রমনের হলে দুর্ভিক্ষ নামতে পারে বলে অনেকেরই আশঙ্কা।