রাঙামাটি রাজবন বিহারে ৪৯ তম কঠিন চীবর দান আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) শুরু হচ্ছে। দুদিনের এ দানোৎসব শেষ হবে ৪ নভেম্বর শুক্রবার বিকালে।
বৃহস্পতিবার বিকালে এ ধর্ম অনুষ্ঠান শুরু হবে। রাজবন বিহারে বেইন ঘরে বেইন ঘর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে ধর্ম অনুষ্ঠান শুরু হবে। এ অনুষ্ঠান দেখতে রাজবন বিহারে দেশ বিদেশের অনেক পূণ্যার্থীর আগমন ঘটে। এ বছর অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শান্তিপুর্ণভাবে এ ধর্ম অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে রাঙামাটি শহরে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদারের পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা পুলিশ।ইতিমধ্যে রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদের নেতৃ্ত্বে জেলা পুলিশের চৌকস কর্মকর্তারা রাজবন বিহার এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
দুই দিনের অনুষ্ঠানে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের রাজবাড়ি জিমনেসিয়াম চত্ত্বর হতে রাজবন বিহারের মুল গেট পর্যন্ত মেলা বসে। এবার মেলা চলাকালে রাতে রাঙামাটি মারী স্টেডিয়াম ও তার আশেপাশে বখাটেরা যাতে কোনো রকম অপকর্মে লিপ্ত হতে না পারে সেজন্য বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাত ব্যাপী তালা দিয়ে স্টেডিয়াম গেট বন্ধ রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এর পাশাপাশি থাকবে পুলিশের নজরদারী।
পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, প্রতি বছর উৎসবে রাজবন বিহারে বিপুল মানুষের সম্মিলন ঘটে। উৎসবে যাতে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা না ঘটে রাজবন বিহারসহ আশেপাশে এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। পোষাকের পাশাপাশি সাদা পোষাকে পুলিশও গোয়েন্দা নজরদারী ছাড়াও সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরায় রাজবন বিহার ওআশপাশএলাকা নজরদারী করা হবে।
ভিড় এড়ানোর জন্য এ বছর প্রধান সড়কের উভয় পাশে মেলা বা দোকান বসাতে দেওয়া হবে না। প্রধান সড়ক থেকে গোটা রাজবন বিহার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন রাখা হবে।
প্রসঙ্গত তথাগত গৌতম বুদ্ধের সময় ২৪ ঘন্টার তুলা থেকে সুতা তা থেকে কোমর তাদের মাধ্যমে চীবর তৈরি করে বুদ্ধ ও শিষ্যসংঘকে দান করেন বিশাখা নামে এক পূণ্যবতি।
১৯৭২ সালে রাঙামাটির লংগদুতে পরিনির্বাপিত বনভান্তে সর্বপ্রথম এ রীতিতে কঠিন চীবর দান প্রচলন করেন। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে এ রীতিতে চীবর দান করছেন পাহাড়ের বৌদ্ধধর্মালম্বীরা। প্রবারণা পুর্নিমার দিন থেকে পাহাড়ে কোথাও না কোথাও প্রতিদিন এ রীতিতে চলছে চীবর দান। রাতদিন এ পূণ্য কাজে অংশ নিচ্ছেন হাজার হাজার পূণ্যার্থী। তাদের বিশ্বাস কঠিন এ দানের কারণে সুখ শান্তি অর্জনের পাশপাশি পরবর্তী জন্মে সুখ লাভ করা যায়।
করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২ বছর এভাবে চীবর দান হয়নি পাহাড়ের। এ বছর এ রীতিতে বিশাখা নিয়মে চীবর দান উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় বন বিহার শাখা প্রধান রাজবন বিহার।
বৌদ্ধশাস্ত্র মতে শুধুমাত্র যে বিহারে ভিক্ষু বর্ষাবাস যাপন করেন শুধুমাত্র সেখানে এ দান করা যায়। কঠিন চীবর দানে কঠিন চীবর ছাড়াও কল্পতুরু, বুদ্ধমূর্তি, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান করা হয়। দানের মধ্যে এ দানকে শ্রেষ্ঠ এবং কঠিন দান বলা হয় এ দানকে। বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন এ দানের মাধ্যেমে ইহকাল পরকাল দু:খ থেকে মুক্তি লাভ করে পরম সুখ নির্বাণ লাভ করা যায়।
এ বছর ৯৮টি বন বিহারে বিশাখা রীতিতে চীবর দান হচ্ছে। আগামী ৭ নভেম্বর মাসব্যাপী চলা কঠিন চীবর দান এ বছরের মত সমাপ্তি ঘটবে।
ছবি: রাজবন বিহার