বছর পেরিয়ে আবারও নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বান্দরবানে শুরু হয়েছে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীদের অন্যতম প্রধান উৎসব বিজু।
বুধবার (১২, এপ্রিল) ভোরে বিজু উৎসব উপলক্ষে বান্দরবানে সাঙ্গু নদীর তীরে একত্রিত হয় চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগাষ্ঠিরা।
বান্দরবান জেলা রান্যাফুল সােসিয়াল অ্যান্ড কালচারাল সােসাইটির আয়ােজনে নিজেদের সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী পােশাকে দলবেঁধে কলা পাতায় বিভিন্ন প্রজাতির ফুল সাজিয়ে উপগুপ্ত বুদ্ধের উদ্দেশ্যে নদীতে ভাসিয়ে সর্বস্তরের মানুষের বিজুর (বৈসাবী) শুভেচ্ছা জানান।
এসময় সকল রােগ মুক্তির ও আপদ বিপদ এবং সকল প্রাণীর হিতসুখ মঙ্গলময় কামনা করেন। পাশাপাশি পুরোনাে বছরকে ত্যাগ করে নতুন বছরকে বরণ করে নেন বুদ্ধ সম্প্রদায়ের এই জনগাষ্ঠীরা।
চাকমা সম্প্রদায়ের মতে , আবহমানকাল ধরে চৈত্র মাসের শেষ দিনে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীরা বিজু উৎসব পালন করে আসছে। সে বিজু উৎসবের উদ্দীপনার আনন্দের মাঝে ঘরে পাচন, জগরাসহ বিভিন্ন তরকারী তৈরী করা হয় প্রতিটি বাড়িতে। চাকমা ভাষায় এটিকে বলা হয় ” বিজু বরান”। ছােট বড় থেকে শুরু করে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পােশাক ও সাজে সাজিয়ে পরিবার প্রধান কর্তাকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিয়ে থাকেন। শুধু তা নয় যুবক যুবতীসহ সপরিবারে গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে নিমন্ত্রণ খেতে যান। তবে চাকমাদের খাবারের মূল আকর্ষন হলাে পাচন তরকারী। শত প্রকার সবজি, মাছ, শুটকি দিয়ে তৈরী করা হয় পাচন তরকারী। প্রতিটি বাড়ীতে পাচন নামের খাবার রান্না করে বাড়িতে আসা অতিথির মাঝে পরিবশন করা হয়।
সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসতে আসা পুণ্যার্থীরা জানান, সবাই যেন সুখে শান্তিতে থাকে এ জন্য আমরা নদীতে ফুল ভাসাই। এ দিনটা আমাদের জন্য খুবই খুশির দিন। ফুল ভাসিয়ে সমস্ত পুরানাে দিনগুলােকে মুছে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছি। নতুন বছরকে বরণ করতে পেরে আনন্দিত সবাই।
সহপাঠীর সাথে চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধানে জান্নাতুল মুশফিকা ফুল বিজুতে অংশ নিয়েছে। তার ভাষা ব্যক্ত করে বলে, সবাইকে ফুল বিজুর শুভেচ্ছা জানাই। আমি আমার বন্ধু অনিকা চাকমা সাথে ফুল বিজু উৎসব আনন্দের সাথে উপভোগ করতে এসেছি। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে।
আয়োজকরা জানান, তিনদিনব্যাপী ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে এই উৎসবটি পালন করবো। যুগ যুগ ধরে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নানা রকমের খাবার-দাবার, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে উৎসবটি পালন করে থাকেন আদিবাসীরা। এই উৎসবটি পাহাড়ে একেক জনগোষ্ঠীর কাছে আলাদা আলাদা নামে পরিচিত। যেমন- বিজু, বিহু, বিষু, বৈসু, চাংক্রান ও সাংগ্রাইং।