পার্বত্য চট্টগ্রামের মং সার্কেল ও রাজতন্ত্রের ইতিহাস বহুকাল পুরনো। ১৭৯৬ খ্রি. রাজা কংজয়ের রাজত্বকাল থেকে রাজ পরিবারের ধারাবাহিক ইতিহাস ঐতিহ্যের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়।
১৮৮৩ সালে রাজবাড়ির অদূরে খালের উপারে মহামুনি টিলায় প্রথম বুদ্ধমূর্তি স্থাপনের মধ্যদিয়ে মহামুনি বুদ্ধ মেলার যাত্রা শুরু হয়। আগামীকাল বসবে এ মেলা। এ মেলাকে কেন্দ্র করে মানিকছড়িতে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। এবার মেলার ১৩৯তম আসর।
ফলে এই বুদ্ধ মেলা ও বাংলা নববর্ষ বরণে ঐতিহ্যে ঘেরা মংরাজবাড়ি, মহামুনি চত্বর ও ত্রিমৈত্রী বটমূলে সাজানো হয়েছে নতুন আলপনায়। সংস্কার ও রংচুনে নতুন রূপে সেজেছে রাজবাড়ীও।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলা মারমা উন্নয়ন সংসদের উদ্যোগে সাংগ্রাইকে স্বাগত জানিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে মারমা নেতৃবৃন্দের পাশাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের সাড়ম্বর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
খাগড়াছড়ি মং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী মহামুনি বিহার চত্বরে ১৩৯তম’ বুদ্ধ মেলা’ ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ১ এপ্রিল শুক্রবার সকাল-বিকেল পাহাড়ি-বাঙালি মিলন মেলায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার চিত্র ফুটে উঠবে।
মহামুনি টিলার মহামুনি বুদ্ধ মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি কুমার নিপ্রু সাইন পাহাড়ের খবরকে বলেন, ১৮৮৩ সালে মিয়ানমার থেকে অষ্টধাতুর তৈরি একটি ‘বুদ্ধ মূর্তি’ এখানে স্থাপন করা হয়। বুদ্ধ মূর্তির স্থাপন কালটি মারমাব্দ চন্দ্র মাসের প্রথম দিন হওয়ায় মারমা জনগোষ্ঠীরা এ দিনটিতে ‘বুদ্ধ মেলা’ হিসেবে পালন করে আসছে।
এ বছর মেলার ১৩৯তম বছর। ফলে পহেলা বৈশাখ বা ১৪ এপ্রিলের এ মেলায় এবার মানুষের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে পরিণত হবে। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবানসহ পাহাড়-সমতলের ২০/২৫ হাজার মানুষের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে মাতোয়ারা হয়ে উঠবে মেলা প্রাঙ্গন ও রাজবাড়ি এলাকা। ফলে প্রাচীন রাজপ্রাসদের বিভিন্ন ভবনে রংচুনের কাজ চলছে।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন ১৪৩০ বর্ষবরণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে ত্রিমৈত্রী বটমূলে।
রং তুলির আঁচড়ে নতুন, নতুন আলপনা আকাঁ হয়েছে অফিসপাড়া ও বটমূলে।
জেলা পরিষদের অর্থায়নে রাজবাড়ি নানুমা দেবী হল ও প্রাচীন ভবনগুলো সংস্কারের ফলে নতুন রূপে সেজেছে রাজবাড়ি। অন্যদিকে উপজেলায় ত্রিপুরারা বৈসু, মারমা জনগোষ্ঠীরা সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু ও বাঙালিরা বৈশাখিতে নববর্ষ উৎসব পালন করেন। যাকে এ বাক্যে বলা যায়’ বৈসাবি’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রক্তিম চৌধুরী পাহাড়ের খবরকে বলেন, আবহমান বাংলার চিরাচরিত বাংলা নববর্ষ বরণে পাহাড়ে হরেকরকম অনুষ্ঠানাদি হয়ে থাকে। যা অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে আরও মজবুত করে।
এ বছর উপজেলা প্রশাসন ও মারমা জনগোষ্ঠীর আয়োজনে বর্ষ বরণে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বুদ্ধ মেলায় জনস্রোতে সম্প্রীতির চিত্র ফুটে উঠবে।