গত বুধবার (৭ জুন) সকাল ৮ টা। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা সদর হতে প্রায় ১৫ কি: মি: সড়ক পথ ধরে আসলাম কাপ্তাই জেটিঘাট। জেটিঘাট হতে ইঞ্জিন চালিত বোটে কাপ্তাই লেকে ঘন্টা খানেক পাড়ি দিয়ে পৌঁছালাম ১১৯ নং হরিনছড়া ভায্যাতলী মৌজা হেডম্যান কার্যালয়। সাথে ছিলেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমন দে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ।
মূলত কাপ্তাই তথ্য অফিস এবং কাপ্তাই তথ্য আপার আয়োজনে মহিলা সমাবেশ, উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণ, সরকারের চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর অগ্রগতি পরিদর্শন এবং স্কুল ও হেডম্যান কার্যালয় পরিদর্শন ছিল ইউএনও এর দূর্গম এলাকায় সফরের কার্যক্রম।
হেডম্যান কার্যালয় পরিদর্শন শেষে আবার ইঞ্জিন চালিত বোটে পাড়ি দিয়ে আধা ঘন্টা পাহাড়ি পথ হেঁটে পৌঁছালাম হরিনছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। যেটা কাপ্তাই উপজেলার ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন এর অতি দূর্গম ৩ নং ওয়ার্ডের বেচারাম কারবারী পাড়ায় অবস্থিত।
মূলত : স্থানীয়দের উদ্যোগে এই এলাকায় মাধ্যমিক পর্যায়ের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ২০২২ সালে হরিনছড়া উচ্চ বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস হতে ৬ষ্ট শ্রেণী হতে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত এর পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক শিশির কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা।
তিনি জানান, মাত্র ২৯ জন শিক্ষার্থী এবং ৬ জন শিক্ষক ও ১ জন অফিস সহায়ক নিয়ে আমরা পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেছি। যেহেতু এটা এমপিওভূক্ত হয় নাই, তাই আমরা এলাকার শিক্ষা বিস্তারের কথা চিন্তা করে বিনা বেতনে এখানে শিক্ষকতা করছি।
প্রধান শিক্ষক আরোও জানান, এলাকার অধিকাংশ জনগোষ্ঠী গরীব তাই মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীরা যৎ সামান্য যা বেতন দেয়, তা দিয়ে আমরা চেয়ার টেবিল এবং প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য খরচাদী বহন করি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক রুপন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, জনি তঞ্চঙ্গ্যা, নুহাইচিং মারমা সকলে স্কুলটি এমপিও ভুক্তকরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বসন্ত কুমার কার্বারী জানান, দূর্গম এই জনপদে ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে কোন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। তাই এই এলাকার ছেলে মেয়েরা ৫ম শ্রেণী পর অনেকদূরে গিয়ে বাসাভাড়া নিয়ে বা হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করে আসছেন। আবার আর্থিক অনটনের কারনে অনেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর আর পড়ালেখা করেন না। তাই আমরা এলাকার শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ স্থানীয় উদ্যোগে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করি। যেখানে এখনো পর্যন্ত শিক্ষকদের কোন বেতন আমরা দিতে পারি নাই।
তিনি আরোও জানান, হরিনছড়া মুখ, ভাঙামুড়া, পাংখোয়া পাড়া, বেচারাম কার্বারী পাড়া, নবীন মেম্বার পাড়া হতে প্রায় ৪- ৫ কি: মি: পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসেন পড়তে। তাই সরকারি সাহায্য ছাড়া আমাদের বিকল্প কোন পথ নেই।
৪নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, এখানে সরকারি দুইটা প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এখানে কোন উচ্চ বিদ্যালয় ছিলোনা। পরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে আমরা অনেক দিন ধরে চেষ্টার ফলে ২০২৩ সালের জানু্য়ারি থেকে এখানে বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু করেছি। দুর্গম অঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থার কথা চিন্তা করে এই বিদ্যালয়টি এমপিও করার উদ্যোগ গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানাই।
গত বুধবার স্কুল পরিদর্শন শেষে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমন দে জানান, অত্যন্ত দূর্গম এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দূর্গম এলাকায় যাতে শিক্ষা কার্যক্রম আরোও প্রসারিত হতে পারে সেই বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক। তাই কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে যাতে এই প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হতে পারে সেই জন্য সব ধরনের সহায়তা করা হবে।