খাগড়াছড়িতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা এশা ত্রিপুরা (নবিনা)’র মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তাকে কে খুন করা হয়েছে। সেটা অনেকটা নিশ্চিত বলছে পুলিশ।
পুলিশ জানায় ‘তার শরীরের একাধিক জখমের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের ধারণা এটি স্ট্রোক হতে পারে না। তাকে খুন করা হয়েছে। ঘটনার পরদিন বিকেলে এশার স্বামী উদ্দীপন ত্রিপুরা আটক করে পুলিশ।
গত শুক্রবার ভোররাতে এশা ত্রিপুরার লাশ খাগড়াছড়ি শহরের পশ্চিম মহাজন পাড়ার ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করার পর লাশটি সকালে হাসপাতালে নিয়ে যায় তার স্বামী এবং প্রতিবেশীরা।
তবে স্বজনদের অভিযোগ,‘ এশার স্বামী উদ্দীপন ত্রিপুরা শুরুতেই এটি স্ট্রোকের মৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। লাশ হাসপাতালে না নিয়ে তার বাড়ি জেলার পানছড়ির কুড়াদিয়া ছড়ায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশীদের চাপে উদ্দীপন লাশ হাসপাতালে নিতে বাধ্য হয়।’
খাগড়াছড়ি পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা এটিকে স্ট্রোকে মৃত্যু নয় বলে জানিয়ে দেয়। এরপর পুলিশ লাশটি ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় স্বামী উদ্দীপন ত্রিপুরা।
এ সময় উদ্দীপন লাশের ময়নাতদন্তে না করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। জেলার ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ সারির নেতা দিয়ে ময়না তদন্ত না করতে পুলিশকে অনুরোধ করা হয়। ঐ সূত্র আরো জানায়, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের এক সদস্য এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে শুরু থেকে তৎপর ছিল। ফলে ময়নাতদন্ত কাজ করতে দেরী হয়।
সূত্রটি জানায়, এশার লাশ পাওয়া যায় বাথরুমে। রক্তে পুরো বাথরুম ভিজে গিয়েছিল। এশার কোমরের উপরে পিঠে, মাথায় একাধিক জখম ছিল। ঘটনা নিয়ে এশার স্বামী উদ্দীপন ত্রিপুরা শুরু থেকে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে। তার কথাগুলো একটির সাথে আরেকটি মিল নেই।
স্বজনদের অভিযোগ ‘এশা স্বামী উদ্দীপন জানায় ভোর ৪ টার দিকে এশা বাথরুমে স্ট্রোক করে পরে যায়।
অথচ প্রতিবেশী খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুভল জ্যেতি চাকমা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান তিনি রাত ১টা ৩২ মিনিটে একটি মেয়ের চিৎকার শুনতে পান ।’
তিনি ফেসবুকে লিখেন ,‘ চেম্বার শেষ করে গতরাত( শুক্রবার) ১ টা ৩২ মিনিটে বাসায় কল করে গেইট খুলে দেয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। এই সময় বিকট এক মেয়েলি চিৎকার। সাথে সাথে কারেন্ট চলে যায়। আমি মোবাইলে টর্চ জ্বালিয়ে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে শব্দের উৎস খোঁজার চেষ্টা করি। আর দ্বিতীয়বার শুনিনি।
সকালে শুনলাম বাথরুমে পরে মাথায় রক্তক্ষরণ হয়ে এক মহিলার প্রাইমারি শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে যেইদিক থেকে শব্দ এসেছে সেই দিকে। শুনলাম বাড়ির লোক উনাকে মৃত অবস্থায় বাথরুমে আবিষ্কার করেছে রাত ৪টা দিকে। আমার মনে হচ্ছে যে চিৎকার আমি শুনেছি সেটাই উনার আঘাত পাবার পরপরই।
খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ রিপোর্ট মাস দেড় মাস সময় লাগবে।
ঘটনার পরদিন খাগড়াছড়ি সদর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহত এশা ত্রিপুরা ভাই খোকা রঞ্জন ত্রিপুরা । মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়,‘আমার বোনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে কে বা কাহারা পরিকল্পিতভাবে আমার বোনকে হত্যা করেছে।’
খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি (তদন্ত ) ও মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা উৎপল বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পুলিশকে লিখিতভাবে এশা ত্রিপুরা’র লাশের বিষয়ে অবগত করে এটি স্ট্রোকজনিত মৃত্যু নয় জানায়। লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তবে এখনো ময়নাতদন্ত রির্পোট পাওয়া যায়নি। হত্যাকান্ডের রাতে এশা ত্রিপুরা স্বামী ও শিশু সন্তানরা ছাড়া ঐ বাসায় আর কেউ ছিল না।
খাগড়াছড়ি থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি এটি হত্যাকান্ড এবং এশা ত্রিপুরার স্বামী উদ্দীপন ত্রিপুরা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে আমরা ধারণা করছি। কারণ ঘটনার সময় তাদের বাড়িতে উদ্দীপন ছাড়া কেউ ছিল না। আমরা তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি।
পারিবারিক সূত্র জানায় উদ্দীপন ত্রিপুরার সাথে এশা ত্রিপুরার ১৫ বছরের দাম্পত্য জীবন। তাদের দুইটি সন্তান রয়েছে। উদ্দীপন ত্রিপুরা বেকার। এশা ত্রিপুরারা যখন মাটিরাঙায় ছিলেন তখন তাদের ঘরের গৃহকর্মী সাথে উদ্দীপনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে পরিবারে শান্তি ছিল না। এ ছাড়াও উদ্দীপন স্ত্রীকে সব সময় সন্দেহ করত।
নিহত এশার এক আত্মীয় জানান, উদ্দীপনকে এ মামলায় সম্পৃক্ত না করতে আমাদের পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এ ঘটনায় শুরু থেকে আমাদের চাপে রাখা হয়েছে। আমরা প্রকাশ্যে কোন কথা বলতে পারছি না।