কলার গাছে তন্তু হতে হস্তশিল্প ও অন্যান্য পণ্য সামগ্রী তৈরীর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে আসছিল দেশের কয়েকটি জেলা। কলা গাছের সেই সুতা দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রথম কলাবতীর সৃষ্টি ও জন্ম বান্দরবান পার্বত্য জেলায়।
কলাবতী শাড়ীটি বান্দরবানের একটি ব্র্যান্ডিং প্রোডাক্ট। এই কলাগাছের সুতায় দিয়ে তৈরী বাংলাদেশের প্রথম শাড়ী। রোববার (০৮ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় কনফারেন্স রুমে পিস মহিলা কল্যাণ সংগঠনের আয়োজনে কলাবতী শাড়ীর সৃষ্টি ও জন্ম নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পিস প্রকল্প পরিচালক ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় কো-অর্ডিনেটর, ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনস্টেশন সাইং সাইং উ (নিনি) এসব তথ্য তুলে ধরেন।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ে এডজানন্ট ফ্যাকাল্টি ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক ও প্রক্টর মুহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওমর ফারুক রুবেল সহ সংবাদ কর্মীরা।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি অনলাইনে তথ্য সংগ্রহও পড়াশোনা করতে থাকি। নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষনের পর বান্দরবান জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক আতিয়া চৌধুরী সহযোগীতা ওয়ার্ল্ড ভিশনের (এনজিও) উদ্যোগে সদরে ক্রাউ আমতলী পাড়া কলাগাছের বাকল থেকে তন্ত্র বের করা হয়। সেখানে গিয়ে কিছু কাঁচা সুতা সেম্পলও নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে কাজটি করার প্রস্তাব গ্রহণ করি।
পরে আগ্রহী হয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব ইয়াসমিন পারভিন তিবরীজি প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেন। বান্দরবান পার্বত্য জেলা-এর উদ্যোগে কলাগাছের তন্ত্র থেকে কাপড় বুননের সুতা উৎপন্ন এবং কাপড় বুননের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তিনি শাড়ী তৈরির প্রসঙ্গে বলেন, সিলেট থেকে তাঁতি হিসেবে দৈনিক ৮০০ টাকা করে (থাকা খাওয়া ও গাড়ি ভাড়া বাদে) রাধাবতি দেবীকে দিয়ে মনিপুরী আদলে শাড়ির তৈরির কাজ করানো হয়। পরে সবগুলি প্রসেসিং পর তৎকালীন ডিসি ব্রিফিং করে এই শাড়ীর নাম দেন কলাবতী শাড়ী। কলা গাছ থেকে তৈরির প্রথম শাড়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহারস্বরূপ নিয়ে কথা তুলেন ধরেন, তৎকালীন ডিসি ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কলাবতী শাড়ী উপহার দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে, বানানা সিল্ক ও কলাবতী স্পার্কল নামে আরও দুইটি উন্নত মানের শাড়ী তৈরি করা হয়। পরে ১২ই জুন, ২০২৩ তারিখে জেলা প্রশাসক জনাব ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজির হাতে তুলে দিই। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কলাবতী শাড়ি উপহারস্বরূপ প্রদান করা হয়। সেটি নিয়ে অনেক মিডিয়াতে প্রচার হয়েছে।
কলা গাছ থেকে সুতার তৈরির মূল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কলাগাছের তন্তু থেকে শাড়ি বানানোর মূল চ্যালেঞ্জটা ছিল শাড়ি তৈরির উপযোগী সুতা প্রসেস করা। প্রসেস সুতা দিলে যেকোন তাঁতি শাড়ি বা যেকোন কাপড় বুনতে পারে। এই কাজে আমার পরিবার প্রায় ৮মাস বিনা পারিশ্রমিক নিঃস্বার্থভাবে আমাকে সার্বক্ষনিক সহযোগীতা প্রদান করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রথমে কলাবতী শাড়ী তৈরির সম্পূর্ণ পরিকল্পনা, আইডিয়া ও প্রক্রিয়া আমার। এই কাজে আমার সম্পৃক্তৃতার আরেকটি কারণ ছিল সোস্যাল রেসপন্সসিবিলিটির জায়গা থেকে এই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করা। বর্তমানে এই কাজে তাঁতি হিসেবে কাজ করেন মৌলভীবাজারের দত্ত সিংহ ও অঞ্জলি দেবী। কলাবতী শাড়ীর প্রজেক্ট এখনো পিস মহিলা কল্যাণ সংগঠনের উদ্যোগে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় চলমান রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কলাগাছের শাড়ীর উদ্ভাবক প্রসঙ্গে বলেন, কলাবতীর সৃষ্টি ও জন্ম বান্দরবানের। কলা গাছের তন্ত থেকে তৈরি কলাবতী শাড়িটি বান্দরবানের প্রথম ব্র্যান্ডিং প্রোডাক্ট। পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে কাপড় তৈরির আরো উন্নত করতে সিলেটের শ্রীমঙ্গল থেকে তাঁতী শিল্পী রাধাবতী দেবীসহ আরো তিনজনকে আনা হয়। এই শাড়িতে তৈরীতে রাধাবতী দেবী উদ্ভাবক নয় বলে দাবী তুলেন পিস মহিলা কল্যাণ সংগঠনে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রভাষক।