পার্বত্য চট্টগ্রামে যেকোন উন্নয়ন কর্মকান্ড করার আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, ভৌগলিক পরিবেশ, অর্থনৈতিক, আর্থ সামাজিক, জীব বৈচিত্র, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জলবায়ুর দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। অতীতে এসব দিক গুরুত্ব না দেওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সব দিক দিয়ে কম বেশী ক্ষতি হয়েছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশের। জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। জীব বৈচিত্র বিলুপ্তি ঘটার পাশাপাশি অবশিষ্ট জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে আছে। পরিকল্পনা ও সমন্বয়ন হীন উন্নয়নের কারণে পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ আরো হুমকির মুখে পড়ছে।
ভবিষ্যতে যেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বসবাসের যোগ্য অবস্থায় থাকে সেজন্য অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন থেকে কাজ শুরু করতে হবে।
মঙ্গলবার রাঙামাটির আশিকা কনভেশন পার্কের সম্মেলন কক্ষে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের বিশেষায়িত ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএসের পার্বত্য চট্টগ্রামে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, কৃষি বাস্তুসংস্থানিক ভূচিত্র পুনরুদ্ধার, প্রকৃতি নির্ভর সমাধান নির্ণয়, সম্প্রদায় ভিত্তিক অভিযোজন, বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রস্তুতকরণে স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রাঙামাটির বিশিষ্টজনেরা।
বক্তারা বলেন অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে এডিবি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে প্রকল্প নেয়া হয়েছিল সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। পাকিস্তান সরকার কাপ্তাই বাধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করায় এ এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি করার পাশপাশি ভূমির সংকট তৈরি হয়েছে। সংরক্ষিত বন পানিতে তলিয়ে গেছে। চাষাবাদযোগ্য ৫৪ হাজার একর জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়া ভূমির সংকট তৈরি হয়েছে। মানুষ জীবন বাচাতে বনে আশ্রয় নিলে বন ও পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও এখানে জিয়াউর রহমানের আমলে বাইরে থেকে মানুষ পুনর্বাসন করায় এখানে সংকট তৈরি করা হয়। এর মাসুল এখন গুণতে হচ্ছে।
সম্প্রতি যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এটি বাস্তবসম্মত। এটি আরো আগে করার প্রয়োজন ছিল। দেরীতে হলেও এমন সুন্দর প্রকল্প গ্রহণ করায় পাহাড়ের মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার করবে।
অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম চাকমার সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, এডিবির ইকোনমি রিলেশন বিভাগের যুগ্ম সচিব এসএম জাকারিয়া হক, সিইজিআইএসের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান।
কর্মশালা শুরুর আগে কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জলবায়ু বিষয়ক প্রকৌশলী আহমেদ জুলফিকার রহমান।
কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন কৃষিবিদ পবন কুমার চাকমা, সড়ক জনপথ বিভাগের রাঙামাটি নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা, শিক্ষাবিদ নিরূপা দেওয়ান, হেডম্যান শান্তি বিজয় চাকমা, হেডম্যান থোয়াইঅং মারমা, অধ্যাপক ড. নিখিল চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. মোঃ জাহিদুর রহমান মিয়া, উন্নয়ন কর্মী পলাশ খীসা, এড কক্সি তালুকদার, রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো আনোয়ার আল হক, রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির যুগ্ম সম্পাদক হিমেল চাকমা প্রমূখ।
এ কর্মশালার আলোকে আগামীতে এডিবির সহায়তায় ক্লাইমেট রিলাইন্স লাইভলিহুড ইমপ্রুভমেন্ট এন্ড ওয়াটারশেড ম্যানেজম্যান্ট ইন সিএইচটি সেক্টর প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হবে।