বান্দরবানে রোয়াংছড়ি উপজেলায় কেন্দ্রীয় জেতবন বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬ষ্টতম সংঘরাজ, বর্ষীয়ান ধর্মীয় গুরু সংঘনায়ক ভদন্ত বিচারিন্দ মহাথের ভান্তের প্রয়াণে দু’দিনব্যাপী জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্টান আগামী ২৯ ও ৩০মার্চ অনুষ্টিত হবে।
মঙ্গলবার (২৬মার্চ) সকালে রোয়াংছড়ি কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গনে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন কমিটি ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় অনুষ্টানে ২৭টি সইং নৃত্য দল (দল বেঁধে সংস্কৃতি নৃত্য), ১৩টি ইঁয়ই নৃত্যদল (দোলনা নৃত্য) এবং ৪শতাধিক ভিক্ষুসংঘের উপস্থিতে লাখ খানেক পূণ্যার্থীর অংশহণে দুদিন ব্যাপী এই অনুষ্টান আয়োজন করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস পাওয়া গেছে। এছাড়াও পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ৫শতাধিক স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন বলে জানানো হয়। অনুষ্টানে তিন পার্বত্য জেলা কক্সবাজার-চট্টগ্রামসহ সারাদেশ থেকে আগত লাখো পূণ্যার্থী অনুষ্টানে অংশগ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করছেন উদযাপন কমিটি।
বান্দরবান পার্বত্য জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলা রোয়াংছড়ি পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা পিতা মৃত উ সাজাই মারমা ও মাতা মৃত মাথুই মারমা’র ৪ ছেলে ও ১মেয়ের মধ্যে চতুর্থ সন্তান হলেন মংম্রা মারমা যা পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্মের সন্ন্যাসী ভিক্ষু হলে নাম রাখা হয় ভদন্ত বিচারিন্দ মহাথের। তাঁর অন্যান্য ভাইবোনেরা হলেন উচিংথোয়াই মারমা, গংব্রা মারমা, মংহ্লাচিং মারমা ও একমাত্রবোন মাসংচিং মারমা। মংম্রা মারমা’ ১৯৩৩ সালে রোয়াংছড়ি পাড়ায় জন্ম হয়। ১৯৪৮ সালের ১৫ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করে শ্রমণ বা প্রবজ্জ্যা গ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালের ২২ বছর বয়সে ভান্তের দীক্ষা নেন। শ্রমণ্য ধর্মে দীক্ষা নেওয়ার পর মায়ানমার রাজধানী ইয়াঙ্গুন শহরে খারাইক্ষ্যং এ লেখা পড়া করে বসবাস করেন। ভান্তে থাকাকালে থেরো, মহাথেরো ও সংঘনায়ক পদে উপাধি লাভ অর্জন করেন। ভান্তে অবস্থায় ৬৮ বছর বষার্বাস বা ওয়া ছিলেন। তিনি ৭০ বছর যাবৎ বৌদ্ধ ভিক্ষু সন্নাসী হিসেবে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারে কাজ করেছিলেন। তিনি ৯০ বছর ৬ মাস বয়সে গতবছর ১৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি কোন ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী রেখে যাননি। পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬ষ্টতম সংঘরাজ, বর্ষীয়ান ধর্মীয় গুরু, সংঘনায়ক ভদন্ত বিচারিন্দ মহাথের তিনি আজীবন রোয়াংছড়ি কেন্দ্রীয় জেতবন বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ভদন্ত তিক্ষিন্দ্রিয় মহাথের রোয়াংছড়ি কেন্দ্রীয় জেতবন বৌদ্ধ বিহারের ভারপ্রাপ্ত বিহারাধ্যক্ষ ও উদযাপন কমিটির সহসভাপতি ভদন্ত পঞঞানন্দ মহাথের ভঙ্গামূড়া পাড়া বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সোমা মহাথের পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদের অধ্যক্ষ ও উদযাপন কমিটির প্রধান সম্পাদক-ভদন্ত ইন্দাচারা মহাথের বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা, রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি চহ্লা মং মারমা, রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মে হ্লা অং মারমাসহ জেলার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।