মুসলমানদের জন্য যেই দুইটি ঈদ উৎসব রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল কোরবানি ঈদ। উৎসবের পাশাপাশি এই ঈদের রয়েছে আলাদা সামাজিক গুরুত্ব। আর ঈদকে সামনে রেখে রান্না আর অতিথি আপ্যায়ন তো আছেই। তাই কিছু কাজ এখন থেকে গুছিয়ে রাখলে অনেক ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। চলুন দেরি না করে দেখে নিই ঈদুল আজহার জন্য সেরা রেসিপি কিভাবে করা যায়…
নিহারি
যা লাগবে: ধনিয়া-১টে চামচ, জিরা-১টে চামচ, মৌরি-১টে চামচ, শাহী জিরা-১টে চামচ, এলাচ-৫/৬টি, দারচিনি-৫/৬টুকরা, জয়ত্রী-৩টুকরা, জয়ফল-১টার অর্ধেক, বড় এলাচ-৩টি,কালো গোল মরিচ -১৫/২০টি, লবংগ-৮/১০ টি, স্টার অ্যানাইস/চাকরি ফুল-৩টি, গুড়ো মসলা , আদা গুড়ো -১টে চামচ, হলুদ গুড়ো -হাফ টে চামচ, মরিচ গুড়ো -১টে চামচ, লবণ-২চা চামচ।
যেভাবে করবেন: মসলাগুলো না টেলে সবগুলো একসাথে করে গুড়ো করে নিতে হবে। পাটায় বেটে / ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে।
এবার এই গুড়ো করে নেয়া মসলার সাথে গুড়ো মসলাগুলো নেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে। তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে।
মগজের কাবাব
যা লাগবে: সেদ্ধ মগজ ১ কাপ, সেদ্ধ আলু ২ টেবিল চামচ (ম্যাশড), সেদ্ধ কাঁচা কলা ১টি, কর্নফ্লাওয়ার ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, কাবাব মসলা আধা চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, মরিচ কুচি ২টি, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ, ডিম ১টি, বিস্কুটের গুঁড়া ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো ও তেল প্রয়োজনমতো।
যেভাবে করবেন: তেল, ডিম ও বিস্কুটের গুঁড়া ছাড়া বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মেখে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। মিশ্রণ থেকে নিয়ে কাবাব আকারে গড়ে ডিমে ডুবিয়ে গুঁড়ো মেখে ৩০ মিনিট ফ্রিজে রাখুন এবং ডুবো তেলে সোনালি রং করে ভেজে তুলুন।
খাসির বাদশাহি রেজালা
যা লাগবে: খাসির মাংস ৩ কেজি, আদা বাটা ২ টেবিল-চামচ, পোস্তদানা বাটা ১ টেবিল-চামচ, শাহি জিরা বাটা ১ চা-চামচ, শুকনা মরিচ (ঘিয়ে ভেজে গুঁড়া করা) ২ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ২ কাপ, ঘি এক কাপের সিকি ভাগ, টকদই এক কাপের সিকি ভাগ,, দারচিনি ৬ টুকরা, লবঙ্গ ৮টি, বেরেস্তা আধা কাপ, জায়ফল-জয়ত্রি গুঁড়া আধা চা-চামচ, কাঁচামরিচ ৮টি, আলুবোখারা ৮টি, ঘন দুধ ১ কাপ, পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ, রসুন বাটা ১ টেবিল-চামচ, বাদাম বাটা ৪ টেবিল-চামচ, সাদা গোলমরিচ গুঁড়া ২ চা-চামচ, তেল আধা কাপ, লবণ পরিমাণমতো, মিষ্টি দই আধা কাপ, ছোট এলাচ ৬টি, তেজপাতা ৪টি, গরম মসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ, তেঁতুলের মাড় স্বাদমতো, টমেটো সস সিকি কাপ, কেওড়া ১ টেবিল-চামচ, মালাই আধা কাপ ।
যেভাবে করবেন: মাংস বড় টুকরো করে টকদই ও মিষ্টিদই, লবণ, গোলমরিচ গুঁড়া দিয়ে মাখিয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা রাখতে হবে। হাঁড়িতে তেল-ঘি গরম করে গরম মসলা ও তেজপাতা ফোঁড়ন দিয়ে পেঁয়াজ বাদামি রং করে ভেজে সব বাটা মসলা কষিয়ে মাংস দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে। মাংস তেলের ওপর এলে গরম পানি দিতে হবে। এরপর আলুবোখারা দিতে হবে।
মাংস সেদ্ধ হয়ে ঝোল কমে এলে বাদাম বাটা, দুধ, কেওড়া দিতে হবে। কাঁচামরিচ, তেঁতুলের মাড়, টমেটো সস দিতে হবে। বেরেস্তার সঙ্গে গরম মসলার গুঁড়া, জায়ফল-জয়িত্র গুঁড়া, শুকনা মরিচ ভাজা গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে মাংস দিয়ে কিছুক্ষণ চুলায় রেখে মালাই দিয়ে নামাতে হবে।
বিফ স্টেক
যা লাগবে: স্টেক মূলত এক ধরনের হাড় সহ কাটা ভাজা মাংসের ফালি। এটি তৈরি করতে লাগবে গরুর মাংস ৬ পিস, রসুন পেস্ট ৪ টেবিল চামচ, আদা পেস্ট ৪ চামচ, সরিষা বাটা ২ টেবিল চামচ, অলিভ অয়েল ২ টেবিল চামচ, ভিনেগার ২ টেবিল চামচ, সয়া সস ৩ টেবিল চামচ, মধু ১ চা চামচ, তেঁতুল পেস্ট ২ টেবিল চামচ, লালমরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো।
যেভাবে করবেন: বিফ স্টেক তৈরি করতে প্রথমে সব উপকরণ একটি পাত্রে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার তাতে এক এক করে মাংসের পিসগুলোতে ভালো করে এপিঠ ওপিঠ ঘুরিয়ে মশলার মিশ্রণটি লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর একটি এয়ার টাইট বক্সে বাকি মিশ্রণটি ঢেলে নিয়ে তাতে মশলা মেশানো মাংসের পিসগুলো রেখে বক্সটি ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে।
এই অবস্থায় ভালো করে বক্সটি ভালো করে নাড়ুন যাতে মাংসের পিসগুলোতে আরও ভালো করে মশলা ঢুকতে পারে। এবার মেরিনেটের জন্য বক্সটি নরমাল ফ্রিজে ৮-১২ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। মেরিনেট হয়ে গেলে একটি গ্রিল প্যানে ১ চামচ তেল ব্রাশ করে তার উপর মাংসের পিসগুলো দিয়ে দিতে হবে।
মাংসের পিসগুলো দুই পাশ ঠিক মতো উল্টে পাল্টে দিতে হবে যেন মাংস ভালো করে সিদ্ধ হয়। হালকা বাদামি বা লাল রং হয়ে গেলেই রেডি সুস্বাদু ও মজাদার কোরবানি ঈদের স্পেশ্যাল রেসিপি বিফ স্টেক। কোরবানির মাংসের অন্যান্য আইটেমের তুলনায় এই স্টেক অনেকটাই স্বাস্থ্যকর। তাই এবারের ঈদে বাড়িতে নির্দ্বিধায় এই খাবারটি তৈরি করতে পারেন।
গরুর রেজালা
যা লাগেব: গরুর মাংস ২ কেজি, আস্ত ধনিয়া ১ চা চামচ, আস্ত জিরা ১ চা চামচ, ধনিয়া গুঁড়া ১/২ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১/২ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, গরম মসলা ১/২ চা চামচ, লালমরিচ ৫-৬টি, তেজপাতা ২-৩টি, হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, তেল ১ কাপ, টকদই ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো।
যেভাবে করবেন: প্রথমেই মাংস ধুয়ে লবণ দিয়ে ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে পানি ঝরিয়ে রেখে দিন। আস্ত ধনিয়া এবং জিরা ভেজে গুঁড়া করে নিন। এবার একটি হাঁড়িতে তেল দিয়ে এতে এক এক করে পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা, লালমরিচ, তেজপাতা, হলুদ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে মাখিয়ে চড়িয়ে দিন এবং পানি শুকিয়ে না আসা পর্যন্ত মাঝারি আঁচে রান্না করুন। কষানো হলে ৩-৪ কাপ পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে ঝোল ঘন হয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ঝোল ঘন হয়ে এলে ভাজা ধনিয়া এবং জিরা গুঁড়া দিয়ে নেড়ে আরও ৪-৫ মিনিট রান্না করে নিন। নামিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার বিয়ে বাড়ির স্বাদে গরু মাংসের রেজালা।
মাটন রেজালা
যা লাগবে: খাসির মাংস- ১ কেজি, পেঁয়াজ বাটা- আধা কাপ, আদা বাটা- ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা- ১ চা চামচ, তেল- আধা কাপ, এলাচ- ৩/৪ টি, দারুচিনি- ৩/৪ টুকরা, কাঁচা মরিচ- ৪/৫টি, দই- আধা কাপ, লবণ- স্বাদমতো।
যেভাবে করবেন: প্রথমে রান্নার পাত্রে তেল দিন। তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজটুকু দিয়ে দিন। এবার পেঁয়াজ কুচি হালকা সোনালি করে ভেজে নিন। ভাজা হয়ে এলে তাতে অন্যান্য মসলা ও মাংস ভালো করে মাখিয়ে দিয়ে দিন। কষিয়ে নিয়ে অল্প পানি যোগ করুন। খুব বেশি পানি দেবেন না। এবার মৃদু আঁচা রান্না করুন আধা ঘণ্টার মতো। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে নেড়েচেড়ে দেবেন। মাংস সেদ্ধ হয়ে উপরে তেল ভেসে উঠলে আর সুন্দর গন্ধ বের হলে নামিয়ে নিন। মাটন রেজালা পোলাও, বিরিয়ানি, পরোটা, রুটি ইত্যাদির সঙ্গে পরিবেশন করতে পারবেন।
কাটা মাসালা মাংস-
যা লাগবে: এক কেজি মাংস টুকরা করা, দুই কাপ পেঁয়াজ কুচি, এক টেবিল চামচ রসুন কুচি, এক টেবিল চামচ আদা কুচি, এক চা চামচ ধনিয়া গুঁড়া, আধা চা চামচ মরিচ গুঁড়া, ছয়-সাতটি শুকনামরিচ, এক চা চামচ হলুদ গুঁড়া, এক চা চামচ জিরা গুঁড়া, লবণ পরিমাণমতো, এক কাপ সয়াবিন তেল, চার-পাঁচটি এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, দুই-তিনটি তেজপাতা, আধা কাপ টকদই, আধা চা চামচ চিনি।
যেভাবে করবেন: চিনি বাদ দিয়ে সব উপকরণ মিশাতে হবে। এখন ৩০ মিনিট মেরিনেট করে একটি গরম সসপ্যানে মিশ্রণটি ঢেলে দিন এবং উচ্চ তাপে ২০ মিনিট রান্না করুন। রান্নার সময় বারবার নাড়তে হবে। যখন পানি শুকিয়ে যাবে এবং তেল ওপরে উঠে আসবে তখন আরও দুই কাপ পানি যোগ করুন। এবার চুলা থেকে নামিয়ে ওপরে চিনি ছিটিয়ে পরিবেশন করুন।
কাচ্চি বিরিয়ানি
যা লাগবে: বাসমতী চাল এক কেজি, খাসির মাংস দুই কেজি (মাঝারি টুকরা, হাড়সহ) আদা বাটা দুই টেবিল চামচ, রসুন বাটা এক টেবিল চামচ, দারুচিনি তিন-চারটি, সবুজ এলাচ আট-দশটি, কালো এলাচ চার-পাঁচটি, লবঙ্গ ১/২ চা চামচ, জয়ত্রী গুঁড়া এক চা চামচ, জায়ফল ১/২ চা চামচ, টকদই এক কাপ, ঘি তিন-চার কাপ, শাহি জিরা ১/২ চা চামচ, আলু (মাঝারি) চার-পাঁচটি, পেঁয়াজ কুচি এক কাপ, পানি ছয় কাপ, লবণ স্বাদমতো, গুঁড়াদুধ দুই টেবিল চামচ, জাফরান এক চিমটি, আলুবোখারা ১০-১২টি, ময়দা দুই কাপ।
যেভাবে করবেন: প্রথমেই চাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। এবার মাংস ধুয়ে লবণ দিয়ে ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। এবার শুকনো মরিচ, দারুচিনি, এলাচ, জিরা, লবঙ্গ, জয়ত্রি, জায়ফল, কাবাব চিনি এবং শাহি জিরাসহ সব মসলা গুঁড়া করে নিন।
এবার একটি হাঁড়িতে মাংস, গুঁড়া করে রাখা মসলা এবং দই মাখিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এবার অন্য একটি হাঁড়িতে ৬ কাপ পানি ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটে ওঠামাত্র চাল দিন। চাল একটু ফুটে এলেই পানি ঝরিয়ে একটি পাত্রে সংরক্ষণ করুন। জাফরান কুসুম গরম পানিতে গুলিয়ে নিতে হবে। চাল ঝরানো গরম পানিতে ঘি মিশিয়ে নিতে হবে। মাংসের হাঁড়িতে এবার এক এক করে ভাজা আলু, পেঁয়াজ বেরেস্তা, আলুবোখারা এবং ঘিমিশ্রিত গরম পানি দিতে হবে। এবার ওপরে চাল দিয়ে জাফরানের মিশ্রণ ঢেলে দিন এবং বাকি ঘিমিশ্রিত গরম পানি দিন। মনে রাখতে হবে, পানি যেন চালের ওপরে না আসে। এবার ময়দা গুলিয়ে হাঁড়ির ঢাকনা দিয়ে ভালোমতো সিল করে চুলায় চড়িয়ে দিন। কোনো ফাঁকা যেন না থাকে ময়দার গোলা একটু নরম করে নিয়ে তবেই ঢাকনা সিল করতে হবে। এক থেকে দেড় ঘণ্টা মাঝারি আঁচে রান্না করুন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল বিয়ে বাড়ির কাচ্চি বিরিয়ানি। কাবাব এবং চাটনির সঙ্গে পরিবেশন করুন মজাদার কাচ্চি বিরিয়ানি।
শাহি বোরহানি
যা লাগবে: টকদই ৩ কেজি, মিষ্টিদই ১ কেজি, মালাই দেড় কাপ, আমন্ড বাদাম (কাঠবাদাম) ৪ টেবিল-চামচ, পোস্তদানা বাটা ১ টেবিল-চামচ, সরিষা গুঁড়া ২ টেবিল-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, বিট লবণ ১ টেবিল-চামচ, পুদিনাপাতা বাটা ২ টেবিল-চামচ, কাঁচামরিচ বাটা ২ চা-চামচ বা পরিমাণমতো, সাদা গোলমরিচ গুঁড়া দেড় চা-চামচ, জিরা (টালা গুঁড়া) দেড় চামচ, ধনে (টালা গুঁড়া) দেড় চামচ, টকদই (টক বুঝে) আন্দাজমতো,, পানি (দইয়ের ঘনত্ব বুঝে) আন্দাজমতো,, বোরহানি বেশি পাতলা হবে না, তেঁতুলের মাড় (বোরহানির টক বুঝে) আন্দাজমতো ।
যেভাবে করবেন: দুই কাপ পানির সঙ্গে সব মসলা মিশিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। পাতলা কাপড় দিয়ে দই ছেঁকে নিতে হবে। সব উপকরণ একসঙ্গে খুব ভালোভাবে মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করতে হবে।।