রাঙামাটির দুর্গম রাজস্থলীতে মারমা মগপার্টির সশস্ত্র অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মারধরে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে নীরিহ যুবক কালাম। বুধবার সকালে সপ্তাহিক হাট-বাজারে গেলে কালামসহ মঈনুল নামের আরো এক মাহিন্দ্রা চালককে আটক করে ব্যাপক মারধর করতে থাকে মগপার্টির ১০-১২ জন সন্ত্রাসী।
এসময় মারধর থেকে প্রাণে রক্ষায় মঈনুল রাজস্থলী থানার ভেতরে ঢুকে গেলে সন্ত্রাসীরা থানা কম্পাউন্ডের ভেতরে ঢুকেও মঈনুলকে মারধর করেছে বলে ভূক্তভোগিরা অভিযোগ করেছে। স্থানীয় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীরা জানিয়েছে, গত একমাসে অন্ততঃ চার দফায় প্রায় ১২জন বাঙালিকে মারধর করেছে মগপার্টির সন্ত্রাসীরা।
এনিয়ে রহস্যজনকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করার অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রাজস্থলী-বাঙ্গালহালিয়া সড়কে বুধবার সারাদিন অবরোধ করেছে বিক্ষোভকারীরা। বৃহস্পতিবারও সারাদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবার কথা জানিয়েছেন ভূক্তভোগিদের পরিবারগুলো।
স্থানীয়রা জানায়, বুধবার বাঙ্গালহালিয়ার ৪নং পাথর বন পাড়া এলাকার দুই বাসিন্দা মাহিন্দ্রা চালক কালাম ও মঈনুল রাজস্থলীতে গেলে মগপার্টির ১০/১২ অস্ত্রধারী সদস্য তাদের আটকিয়ে বেদড়ক পেটাতে থাকে।
এসময় কালাম তাদের মারধরে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অপরজন মঈনুল মগপার্টির সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নিজের প্রাণ রক্ষায় রাজস্থলী থানা কম্পাউন্ডে ঢুকে যায়। সন্ত্রাসীরা সেখানে ঢুকেও মঈনুলকে পেটায়। এতে করে তার পুরো শরীরে রক্তাক্ত লাল ফুলা জখম হয়ে যায়। মঈনুল জানায়, আমি প্রচন্ড মারধরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এই ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গুরুত্বর আহত কালামকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে মুমুর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনসহ নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগ এনে মগপার্টির সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি রাজস্থলী বাঙ্গালহালিয়া এলাকা থেকে মগপার্টি নামক সন্ত্রাসী বাহিনীকে বিতারিত করার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বুধবার সারাদিন বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় শতাধিক এলাকাবাসী। এসময় আন্দোলনকারিরা প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মগপার্টি নামক সন্ত্রাসীদের ব্যাপক চাঁদাবাজি ও সশস্ত্র তৎপরতাসহ প্রতিনিয়ত মারধরে বাঙ্গালহালিয়ার জনগণ অতিষ্ট্য হয়ে তাদের আস্তানায় আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে হাজারো বিক্ষুব্ধ মানুষের সামনে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ বাঙ্গালহালিয়া থেকে মগপার্টিকে বিতারিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও মগপার্টির সন্ত্রাসীদের হাতে প্রতিনিয়তই ব্যাপক চাঁদাবাজি ও মারধরের শিকার হচ্ছে স্থানীয় বাঙ্গালীরা। স্থানীয় থানার কয়েক গজের মধ্যে এই ধরনের হামলার ঘটনাগুলো ঘটলেও সংশ্লিষ্ট্যরা নিশ্চুপ থাকার অভিযোগও তুলেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
বাঙ্গালহালিয়ার এই ঘটনা নিয়ে বুধবার রাতে চন্দ্রঘোনা থানার ওসিকে মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা পুলিশের উধ্বর্তন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজীব কান্তি রুদ্র মুঠোফোনে জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। স্থানীয় লোকজনদের সাথে কথা বলেছেন। স্থানীয় লোকজনদের কিছু দাবি দাওয়া ছিল ওই সব দাবি দাওয়া প্রশাসন মেনে নিয়েছে। তবে স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে স্থায়ী নিরাপত্তা চায়।
ইউএনও এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, প্রশাসন তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। তাদেরকে ক্ষতি পূরনের ব্যবস্থা করা হবে। মগপার্টির সাথে বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিরসনে সবার সহযোগিতা দরকার বলে মনে করি।